সিবিএন ডেস্ক:
সাহসী, যৌক্তিক আর সুস্পষ্টভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর হয়ে কথা বলতে পারার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। আর তার এই অবস্থানের বীজ বপন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সব মিলিয়ে এই জননেত্রী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা তিনি অর্জন করেছেন। তার কাজ এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব অঙ্গনে সম্মানের আসনে পৌঁছাতে পেরেছে।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তার নেওয়া পদক্ষেপের বস্তবায়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেখে চলা অবদান সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভ্যাকসিন হিরো’, ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’, ‘স্টেট ম্যান’, ‘স্টার অব ইস্ট’, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকন্যার মাধ্যমে আজ বাংলাদেশ ‘সমুদ্র জয়’ থেকে শুরু করে অর্জন করেছে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’-এর মতো সম্মাননা।

শান্তি প্রতিষ্ঠায় গোড়াপত্তন:
১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগ্যতার বহির্প্রকাশ ঘটান শেখ হাসিনা। দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে দেশের পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার দেয়। ক্ষমতার ওই মেয়াদেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ‘ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলন’-এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ (CERES) মেডেল প্রদান করে। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছেন তিনি।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও পারস্পরিক সন্তোষজনক সম্পর্ক, নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ, নারী ও শিশু এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতায় অবদানের জন্য ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালামের নামে প্রতিষ্ঠিত ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল-এর ‘ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ পান।

মানবিক প্রধানমন্ত্রী:
মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন শেখ হাসিনা। অসহায় মানুষগুলোর প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী ‘আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৮ সালে ‘স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ পদক’ পান। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস-আইপিএস’ এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং-ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে এ দুটি পদক প্রদান করে।

চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ:
২০১৫ সালে শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশ-বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী পদক্ষেপ নেওয়ায় তাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওই বছরেই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এমডিজি) অর্জনে বিশেষ করে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী:
উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ২০১৯ সালে তাকে এ পদক দেওয়া হয়। নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘গ্লোবাল সামিট অব ওমেন’ তাকে এই সম্মাননা দেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য খাতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৬ সালে ইউএন উইমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পদক প্রদান করে।

টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)।

এছাড়া ১৯৯৯ পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ২০০৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, ২০১১ ও ২০১২ গ্লোবাল ডাইভার্সিটি অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৭ নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার পান।

খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি তাকে সনদ প্রদান করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আন্তরিক ও সততার সঙ্গে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছেন, কিন্তু বিশ্ব তাদের নিজেদের তথ্য দিয়ে যাচাই করে দেখছে, বাংলাদেশকে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছানোয় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ভূমিকা রাখছে। যে যা-ই বলুক, বিশ্ববাসী প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নেতৃত্ব অনুধাবন করছে, যিনি কেবল বাংলাদেশ না, শোষিত মানুষের পক্ষে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হয়ে উঠতে পেরেছেন। এবারও জাতিসংঘে তার যে সাহসী উচ্চারণ, সেটা স্বীকৃতিযোগ্য বটে। সবার জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্য করা, জলবায়ু পরিবর্তনে ধনী দেশগুলোর দায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান, এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই অনন্য ভূমিকার জন্য ৩১টির বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।’