► আনা হচ্ছে অ্যালার্মিং সিস্টেম
► ১০০০ ছাউনি করা হচ্ছে
► ২৩ জেলা বজ্রপাতপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে

কালেরকণ্ঠ:
বজ্রপাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শে কী কী করা হবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে অ্যালার্মিং সিস্টেম, হাওর ও ফাঁকা স্থানে ছাউনি তৈরি এবং জনসাধারণকে সচেতন করা। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দেশের ২৩টি জেলায় এক হাজার ছাউনি তৈরি করা হবে। এই জেলাগুলোকে বজ্রপাতপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। এরই মধ্যে দেশের গবেষকদের নিয়ে তাঁরা সেমিনারও করেছেন। সেখান থেকে অনেক পরামর্শ এসেছে। ওই পরামর্শ ও বিদেশের বজ্রনিরোধক সিস্টেমের খোঁজখবর নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাঁর অনুমোদন সাপেক্ষে প্রজেক্টটি গতি পাবে।

জানা গেছে, এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে দেশের যে এলাকায় যখন বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দেবে, তখন ওই এলাকার বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে মেসেজ চলে যাবে যে কখন, কোন জায়গায় বজ্রপাত হবে। অন্তত ৪০ মিনিট আগে সেই তথ্য তাদের জানানো যাবে এবং আবহাওয়া বার্তার মতো প্রচারমাধ্যমেও সেটি প্রচার করা হবে। এতে করে মেসেজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারবে।

সুনামগঞ্জ, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাজশাহীসহ দেশের ২৩টি জেলাকে বজ্রপাতপ্রবণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জেলাগুলোতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এক হাজারটি ছাউনি তৈরি করা হবে, যার ওপরে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড ব্যবহার করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান গতকাল রবিবার সচিবালয়ে তাঁর কার্যালয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বজ্রপাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে একটি প্রজেক্ট নিয়েছি। বজ্রপাতপ্রবণ জেলাগুলোতে লাইটিং ডিটেক্টর সেন্টার বসাব। ৪০ মিনিট আগে সিগন্যাল দেবে। সিগন্যালটি অ্যাপের মাধ্যমে ওই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে চলে যাবে। আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হবে। ফাঁকা স্থানে এক কিলোমিটর ব্যবধানে আশ্রয়কেন্দ্র করা হবে, যাতে সিগন্যাল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে।’

তিনি জানান, প্রজেক্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর কাজ শুরু করা হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে ২৮২ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিভাগে ৪২, ময়মনসিংহে ৩০, চট্টগ্রামে ২৩, সিলেটে ২৫, রংপুরে ২৭, রাজশাহীতে ১০৪, বরিশালে ১০ ও খুলনায় ২১ জন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে রাজশাহীতে।

এ ছাড়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে মারা যায় ১৭৯ জন। ২০১২ সালে ২০১, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ২২৬, ২০১৬ সালে ৩৯১, ২০১৭ সালে ৩০৭, ২০১৮ সালে ৩৫৯, ২০১৯ সালে ১৯৮ জন ও ২০২০ সালে ২৪৭ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অ্যালার্মিং সিস্টেম ও বজ্র নিরোধক দণ্ড ব্যবহার করে হতাহতের সংখ্যা কমাতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশেও সেই সিস্টেম চালু হতে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ ভৌগোলিক অবস্থান। বড় বড় গাছ কেটে ফেলাও একটি কারণ। উঁচু গাছপালা বজ্রনিরোধক হিসেবেও কাজ করে। খোলা স্থানে মানুষের কাজ করা এবং বজ্রপাতের বিষয়ে অসচেতনতাও বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়ার জন্য দায়ী। তাপমাত্রা বাড়লেও বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ কালের কণ্ঠকে জানান, ‘অ্যালার্ম সিস্টেম করতে পারলে আগে থেকেই মানুষকে সচেতন করা যাবে।’

বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, একের পর এক গাছ কেটে ফেলার কারণে এই সমস্যা বাড়ছে। গাছ বজ্রপাত নিরোধক হিসেবে কাজ করত।’ তিনি আরো জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড ব্যবহার করা হয়।