চট্টগ্রাম সংবাদদাতা:
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে ২০০১ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসায় চাকরি শেষ হওয়ার পর ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন একেএম ফজলুল্লাহ। চেয়ারম্যান পদে ছিলেন ২০১১ সাল পর্যন্ত।
এসময় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ সৃষ্টির পর তিনি এমডি পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আবারও এক বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। তারপর চার দফায় আট বছর এবং সর্বশেষ তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি।
দীর্ঘদিন একই পদে থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১১ বছরে অন্তত ৯ বার বাড়ানো হয়েছে ওয়াসার পানির দাম। নিজের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনকেও তিনি দিয়েছেন চাকরি।
চট্টগ্রামের প্রতি উদার প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তা বাস্তবায়নে রয়েছে ধীরগতি। অভিযোগ উঠেছে, সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে একনেকে অনুমোদিত মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। যা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন ২০২০ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কিছু কাজ অসম্পন্ন রয়ে গেছে। এই প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পায় কোরিয়ান কোম্পানি তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং।
প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতে তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিংকে দেওয়া হয় ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজ। কিন্তু সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকার বেশি। কাজ শুরু করলেও অভিজ্ঞতার অভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে নানান ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজে কাজ না করে অনুমোদনহীন উপ-ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানোর প্রমাণও মিলেছে।
ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা জানান, চলমান কাজগুলো যেখানে শেষ করতে পারছে না, এমন অবস্থায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজও তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাছে দেওয়ার তোড়জোড় করছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি। কাজের মান ঠিক রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী বার বার তাগিদ দিলেও তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিংকে বার বার কাজ দেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার দুটি কাজ তারা করেছে, যা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। সেখানে স্যুয়ারেজ প্রকল্পও তাইয়ংকে দেওয়ার বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে।
আরও অভিযোগ উঠেছে, স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-২ (ডব্লিউ-টু) এর টেন্ডার জমাদানের সময় চায়না ফার্স্ট মেটালার্জিকাল গ্রুপ নীতিমালা ভঙ্গ করে এক খামে টেকনিক্যাল এবং ফিন্যান্সিয়াল প্রস্তাব জমা দিয়েছে। নীতিমালা ভঙ্গ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একের পর এক অনিয়ম ও বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়। একইসঙ্গে বাড়ছে জনভোগান্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক প্রকৌশলী জানান, ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের ব্যর্থ ঠিকাদার তাইয়ং এর হাতে যদি স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ চলে যায় তাহলে এই প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৯ মে ওয়াসার এমডি’র বেতন-ভাতা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়। মূল বেতন ধরা হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। গত ৪ মে ওয়াসার ৬১তম বোর্ড সভায় তিনি আবারও মূল বেতন ৪ লাখ ৫০ হাজার করার আবেদন করেন বলে জানান ওয়াসার এক বোর্ড সদস্য।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের হোসাইন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওয়াসা লস দিয়ে আসছে। ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছে। ২০১৩ সালে এক হাজার লিটার পানির দাম ছিল ৬ দশমিক ৫৮ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৯ টাকা ৯২ পয়সা। এ অবস্থায় এমডির বেতন বাড়ানো নৈতিকতা পরিপন্থী।
চট্টগ্রাম ওয়াসার নন রেভিনিউ ওয়াটার (এনআরডব্লিউ) নামে ২৫-৩৩ শতাংশ সিস্টেম লস দেখানোর ফলে বছরের পর বছর লোকসান দিতে হচ্ছে। এতে ওয়াসা প্রতি বছর কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি নগরীর অনেক এলাকার মানুষকে পানি সরবরাহ দিতে পারছে না।
এরইমধ্যে ক্যাব চট্টগ্রাম ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলোতে এমডির দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দুদকেও অভিযোগ উঠেছে ওয়াসার এমডি’র বিরুদ্ধে। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য রুলও জারি করেছিল হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ’র মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।