এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা জনপদের সাত লাখ মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে একমাত্র ভরসাস্থল একশত সয্যায় উন্নীত চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এ উপজেলার পার্শবর্তী পশ্চিমে পেকুয়া , মহেশখালী ও কুতুবদিয়া, পূর্বে পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলার লোকজন এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা সেবা নিতেও এখান থেকে সহজে যাওয়া যায়।
পাশের চারটি উপজেলার রয়েছে বার লাখ মানুষের বসবাস । প্রতিদিন এসব উপজেলার বেশীর ভাগ রোগি ছুটে আসেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে । তবে রোগির চাপ ও চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধিকল্পে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ সরকারি হাসপাতালটি গত এক বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রুপান্তরে আবকাঠামোগত ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবলসহ নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ এখনো সম্পন্ন করা হয়নি।
চকরিয়া উপজেলার প্রাায় ৮০ ভাগ মানুষ মধ্য ও নিম্নবিত্তের। তাই কোনো রোগে আক্রান্ত হলে ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অথচ জনবল সংকটে এখানে মিলছে না কাংখিত স্বাস্থ্যসেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ উপজেলা স্বাস্থ্য সেবায় মঞ্জুরীকৃত ২২২টি পদের মধ্যে ৮৮টি শূন্য। বিশেষজ্ঞ ১০টি জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ থাকলেও কর্মরত আছেন শুধুমাত্র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ১জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ ডাক্তারের বিপরীতে শুধুমাত্র ৫জন ডাক্তার রয়েছে।
৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ সরকারি হাসপাতালে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মঞ্জুরীকৃত ২৪টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১২জন। নিরাপত্তা প্রহরী ও ওয়ার্ড বয় মঞ্জুরীকৃত ৪টি পদের বিপরীতে আছে ২জন। ঝাড়-দার ৫ জনের বিপরীতে আছে ২জন। ফলে দরিদ্র রোগীদের বাধ্য হয়ে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, গাইনি, ইএনটি, অর্থো সার্জারি, কার্ডিও , এ্যানেসথেসিয়া ও চক্ষু বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ শূন্য রয়েছে। আই.এম.ও , ই.এম.ও , মেডিকেল অফিসার (হারবাল) নেই । সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২০টি পদের মধ্যে ১টি শূন্য। নেই সহকারী নার্স, হিসাবরক্ষক, পরিসংখ্যানবিদ, জুনিয়ার মেকানিক ও কার্ডিও গ্রাফার।
এছাড়া তিনটি মেডিকেল টেকনোলজি (ল্যাব) পদে ১টি শূন্য। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ২০টি পদের মধ্যে ১৫টি খালি। ৪টি ফার্মাসিস্ট পদের মধ্যে খালি ২টি ও প্রধান সহকারি নেই। ৬৬টি স্বাস্থ্য সহকারী পদের মধ্যে রয়েছে ৪৩ জন। ৬জন অফিস সহায়কের মধ্যে রয়েছে মাত্র ১জন। এছাড়া শূন্য রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফিজিও) ও ১টি আয়া, তিনটি পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দুটি নিরাপত্তাকর্মী ও দুটি ওয়ার্ড বয়ের পদ। সর্বমোট ২২২টি পদের মধ্যে শূন্য ৮৮টি। ১৬ বছর যাবৎ অকেজু হয়ে পড়ে আছে এক্সরে মেসিন । বর্তমানে নতুন একটি এক্সরে মেশিন বরাদ্দ হলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে তা থাকায় চালু করা যাচ্ছেনা।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশে নেই মেডিকেল অফিসার ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। এসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসারের ১৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৮জন । ২০টি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৫টি পদ। দুইটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক রয়েছেন একজন।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদুল হক বলেন, চকরিয়াসহ আশে পাশের উপজেলার রোগির চাপ ও চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবকাঠামো ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জনবলসংকট ও সরঞ্জামাদি না থাকায় এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। সরকারিভাবে ১০০ শয্যা হাসপাতাল এখনো চালু হয়নি। তবে জনবল ও চিকিৎসা-অফিস সরঞ্জামাদি পাওয়ার পর ১০০ শয্যার উন্নীত হলে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে গুরত্বপূর্ণ খালি পদে ডাক্তার নিয়োগ ও শূন্য পদগুলো পূরনের জন্য সিভিল সার্জন অফিসে জানানো হয়েছে। শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।