সিবিএন ডেস্ক:

প্রখ্যাত সাংবাদিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, মোহাম্মদ ‍নুরুল ইসলাম নির্লোভ রাজনীতিকে পাহারা দিয়েছেন কিন্তু ব্যবহার করেননি। ১৯৭৮ সালে তিনি পত্রিকা বের করেন। ৭৮ সাল বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের জন্য কি কঠিন সময় তা সবাই জানে। বঙ্গবন্ধু যেমন রাজনীতিকে ব্যবহার করে নিজে লাভবান হতে চাননি, রাজনীতির উপর আস্থা রেখেছেন। নুরুল ইসলামও তাই। কঠিন সময়ে তিনি বঙ্গবন্ধু কোট গায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। ৭৮ সালে যখন জয় বাংলা বলার লোক পাওয়া যায় না, আওয়াামী লীগ বলার লোক পাওয়া যায়না, তখন কিছু লোক পাওয়া গেছে। নুরুল ইসলাম সাহেব তেমনই একজন। বঙ্গবন্ধু তাকে পলিট ব্যুরোর মেম্বার করেছিলেন। এটা ছিল বাকশালের সর্বোচ্চ পদ। আপনি কি ধারনা করতে পারেন নুরুল ইসলাম সাহেবের অবস্থানটা কোথায়? এটি অনেক বড় মাপের মানুষের বেলায় ঘটে।

সদ্য প্রয়াত কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দৈনিক কক্সবাজার সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের স্মরণে শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত এক নাগিরক শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। নুরুল ইসলাম সাহেব সেই আদর্শকে ধারণ করেছেন। তিনি লোভী রাজনীতিক হয়ে উঠতে চাননি। বঙ্গবন্ধু সেই আদর্শের মানুষ যিনি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে বলেছিলেন আমাদের মন্ত্রিত্বের দরকার নেই, আগে দলটাকে গঠন করি। এখন দলের পদ না পেলেই গোলাগুলি মারামারি। সেই জায়গায় নুরুল ইসলাম সাহেব দলীয় পদের দিকে লালায়িত ছিলেন না। তার ক্ষমতা যেটুকু ছিল তা তিনি অপব্যবহার করেননি।

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল আরও বলেন, তিনি জনপ্রতিনিধি ছিলেন, স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, তিনি সাংবাদিকতা করেছেন, তিনি রাজনীতির কাছাকাছি ছিলেন-এর কোনটাতেই লাভজনক প্রকল্প দেখিনা। বাড়ি-ঘর বিক্রি করে দিয়ে তিনি পত্রিকা বের করেছেন। যখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তখনও সততার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর আদর্শের জায়গাটি হচ্ছে ক্ষমতা থাকবেন কিন্তু ক্ষমতার অপপ্রয়োগ আমরা করবো না। তার আদর্শের আরেকটি জায়গা ছিল, তিনি অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। নুরুল ইসলাম সাহেব শুধুমাত্র একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন না। তিনি যে কাজগুলো করেছেন তার একটাও ব্যক্তিগত জীবনের জন্য নয়, পরিবারের জন্য নয়-সবগুলো করেছেন মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধু যেভাকে মানুষকে ভালোবেসেছেন নুরুল ইসলাম সাহেবও কক্সবাজারকে ভালোবেসেছেন। কক্সবাজারের উন্নয়নের জন্য যেখানে যেতে হয়েছে, যার সঙ্গে যেতে হয়েছে, সেখানে গেছেন। কাজেই আমরা নুরুল ইসলামকে যেন শুধু মাত্র কক্সবাজারের ছোট্ট জিওগ্রফিক্যাল জায়গায় চিন্তা না করি। তার চিন্তা, দর্শন, তার অবস্থান এর চাইতে অনেক উপরে। জাতীয় পর্যায়ের চাইতে অনেক বেশি।

জেলা আওমী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, সাংসদ কানিজ ফাতেমা আহমেদ, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক সাংসদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সাংসদ অধ্যাপক এথিন রাখাইন, বিশিষ্টি শিক্ষাবিদ, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং, জেলা জাসদের সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল, কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমেদ, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, জাতীয় পার্টির নেতা মুফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন, প্রয়াত মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সন্তান, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, ক্রীড়া সংগঠক জসিম উদ্দীন, কক্সবাজার থিয়েটারের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট তাপস রক্ষিত, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন প্রমুখ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের। শোক সভা সঞ্চালনা করেন কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল।