মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম):

ডা. রাশেদুল ইসলাম (২৮)। বাঁশখালীর প্রান্তিক জনপদ ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী (৯নং ওয়ার্ড) ১নংপাড়া এলাকার মাওলানা নুরুল কাদের ও নাছিমা আক্তার দম্পতির প্রথম পুত্র। মাওলানা নুরুল কাদের ১৯৯৯ সালে নিজ এলাকায় মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মক্তবে পাঠদান দিতেন। পরে ২০০১ সালে তিনি নিজ এলাকায় কোনো আরবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এলাকার মানুষের পরামর্শক্রমে ১টি নূরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন। সেখান থেকে আজ অবধি শত শত ছাত্র-ছাত্রী আরবী শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। পরবর্তীতে তিনি ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে অরবিট ক্রেডিট স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি সাতকানিয়া দক্ষিণ রুপকানিয়া বায়তুশ শরফ শাহ্ জাব্বারিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি দক্ষিণ রুপকানিয়া সিকদার পাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করছেন।

ডা. রাশেদুল ইসলামের নানা ছিলেন তৎকালীন টিএন্টির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা আলহাজ্ব আবদুল করিম। ১৯৯৭ সালে রাশেদুলকে নিয়ে যান নানার বাড়ি বাঁশখালী পৌরসভার জলদিতে। সেখান থেকে স্বপ্ন দেখেন উচ্চ শিক্ষার। ১৯৯৮ সালে ভর্তি হন উত্তর জলদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে সফলতার সহিত পাস করে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিসহ ২০০৯ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ থেকে ফের জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন ১ বছর। পরবর্তীতে ২০১১-১২ সেশন থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করার পর থেকে বর্তমানে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে দায়িত্বরত আছেন তিনি। সবশেষ, ৪২ তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন।

২০০৩ সালে নানা ও ২০০৭ সালে নানি ইন্তেকাল করলে নানার বাড়িতে একা হয়ে যান রাশেদুল। পরবর্তীতে তিনি চলে আসেন মা-বাবার কাছে।

ডা. রাশেদুল ইসলাম তাঁর পরিবারের চারভাই দুইবোনের মধ্যে বড়। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাশেদুল প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সফলতার সহিত শিক্ষা বৈতরণী পার করেন। ২০০৭ সালে রাশেদুলের পরিবার জলদি খন্দকার পাড়া এলাকায় বসতি গড়েন। ছনুয়ায় তারা প্রায় সময় আসা যাওয়া করেন।

রাশেদুল ইসলামের প্রতিবেশী চ.বি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নেজাম উদ্দিন বলেন, ’বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়ন একটি দূর্গম ও প্রান্তিক এলাকা। ছনুয়ার ১নংপাড়া এলাকার মানুষের এ যেন এক বাঁধভাঙা আনন্দের উপলক্ষ্য৷ এমন একটি এলাকা থেকে তার উঠে আসা, যে এলাকার কিছু ছেলে বা মেয়ে হঠাৎ আধুনিক শহরের আধুনিকায়নের বেড়াজালে এসে যখন পতিত হয়, তখন বুঝা যায় কতটা বেখেয়ালি বা বেপরোয়া জীবনের সাক্ষ্য দিয়েছিল এতদিন তারা। আর এমনই দূর এলাকার খাঁটি গ্রামীণ জনপদের কোন এক মধ্যবিত্ত সহজ-সরল পরিবারের সন্তান যখন সাফল্যের চূড়া ছুঁই, এই আনন্দের সীমাটা বাঁধভাঙা আঠারোর যৌবনের মতো।’

এতবড় সফলতার পেছনের গল্প কি জানতে চাইলে ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার আত্নবিশ্বাস আল্লাহ আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। আমার নানা-নানি ও মা-বাবার কঠুর পরিশ্রমে এবং আমার অধ্যাবসায় আমাকে সফলতার দারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। আমি সবার কাছে দোয়া প্রার্থী। আমার জন্মভূমি ছনুয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব জরাজীর্ণ। এখানে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে আমি আমার এলাকার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে কাজ করবো।’