সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভের পাশে শুকনাছড়ির রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু সিভিল সার্ভিস একাডেমি (বিএপিএ) ও বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএএসএ) নিজস্ব ভবন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের অনেক বিপন্নপ্রায় বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি কক্সবাজারের এই রক্ষিত বনভূমি। এই বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তা স্পষ্টতঃ আইন বিরোধী এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। আমরা সরকারের এই উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং একই সাথে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি অবিলম্বে বনভূমি উজাড় করা এই উদ্যোগ বাতিলের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ঝিলংজা বনভূমিকে ‘রক্ষিত বনভূমি’ বলে ঘোষণা করার পর থেকে বনবিভাগ এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। ২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত আছে। এই বনভূমির বরাদ্দ দেয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা। সেখানে অনেক দুর্লভ প্রজাতিসহ ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এ ছাড়া বন্য প্রাণীর মধ্যে আছে এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি। এ কারণে বন বিভাগ থেকে ‘এই ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে বন বিভাগের আওতাধীন এই জমিকে ভূমি মন্ত্রণালয় বেআইনিভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ইজারা দিয়েছে।

 

প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপন্ন করে সংরক্ষিত বনভূমিতে প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দ দেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারের একটি কুচক্রী মহল উন্নয়নের নামে পাহাড়, বনভূমি উজাড় করে দিচ্ছে। বনভূমি রক্ষার বদলে, স্থাপনা নির্মাণের জন্য বনভূমি ইজারা দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজেরর প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রাণ এবং প্রকৃতি ধ্বংস করা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

 

এছাড়া এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন বনভূমিতে এবং রক্ষিত বনভূমি এলাকায় যে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অবৈধ। কিন্তু ইজারা দেয়ার উদ্দেশ্যে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এই বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি দেখিয়ে বরাদ্দ দেয়া জমির বাজারমূল্য ৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা হলেও একাডেমির জন্য প্রতীকী দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা।

 

আমরা কক্সবাজার শুকনাছড়িতে সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু সিভিল সার্ভিস একাডেমি করার উদ্যোগ বাতিলের দাবী জানাই একই সাথে দেশের সকল বন, নদী, পাহাড়, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিধ্বংসী সকল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই।