স্পোর্টস ডেস্ক: প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের আভাস দিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে হেরে যায় স্বাগতিকরা। বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতে ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করলেও সীমিত ওভারের আরেক ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের জায়গা নড়বড়ে ছিল বেশ। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ভাবনা বাড়ছিল টাইগারদের। তবে সম্প্রতি এই ফরম্যাটেও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। নিজেদের খেলা সবশেষ তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবগুলোতেই জিতেছে টাইগাররা।
কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে আসলো বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠে ফিরেই ইতিহাস রচনা করে টাইগাররা। প্রথমারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় অজিদের। আরও একটি ইতিহাস রচনা হলো আজ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো কুড়ি ওভারের সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল।
কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ শুরু হয় গত ১ সেপ্টেম্বর। প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জেতে স্বাগতিকরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জিতলে ইতিহাস লেখা হতো সেদিনই, তবে অপেক্ষা বাড়লেও আক্ষেপে পুড়তে হয়নি স্বাগতিকদের। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে কিউইদের ৯৩ রানে বেধে দিয়ে ৯৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ৬ উইকেটের জয়। এতেই লেখা হয়েছে ইতিহাস!
এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করেত পারেনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৯৩ রানেই গুঁটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও ছিল বেশ নড়বড়ে। প্রথম দুই ওভার থেকে স্কোর বোর্ডে ৪ রান তুলতে পারেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে ব্রেক-থ্রু এনে দিন স্পিনার কোল ম্যাককঞ্চি। ফেরান ৬ রানে ব্যাট করা লিটনকে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এজাজ প্যাটেল। শুরুতে তার শিকারে পরিণত হন সাকিব আল হাসান। ৮ বলে ৮ রান করে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। দুই বল বাদে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিকুর রহিম। রানের খাতা খুলতে পারেননি এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
৬ ওভার শেষে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খানিক বিপদে পড়ে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে দলকে বিপদমুক্ত করেন ওপেনার নাঈম ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটি থেকে আসে ৩৪ রান। ধীরগতির ব্যাটিংয়ে দুজন মিলে অবশ্য খরচ করেন ৫১ বল। নাঈম সেট হয়েও ম্যাচ শেষ করতে ব্যর্থ হলে ভাঙে এই জুটি। ঝুঁকি নিয়ে ২ রান নিতে গেলে রান আউটে কাটা পড়ে ফেরেন ৩৫ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে।
এরপর আফিফ হোসেন যখন উইকেটে এলেন, তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশ দলের প্রয়োজন ছিল ৩৩ বলে ২৪ রান। বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারতে একেবারে ঝুঁকি নেননি মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ। দুজনের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে ইতিহাস লেখে বাংলাদেশ। এতে ৬ উইকেট ও ৫ বল হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ দল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদউল্লাহ ৪৮ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ৬ রান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের ইনিংসের শুরুটা একেবারেই ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে ফেরান বাংলাদেশি বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। মেডেন ওভারে কিউই ওপেনারকে তুলে নেন তিনি। এতে রানের খাতা খোলার আগে সাজঘরে ফেরেন রাচিন। এক ওভার না যেতেই আবার আঘাত হানেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এবার ফেরালেন ফিন অ্যালেনকে। ৮ বলে ১২ রান করেন অ্যালেন।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মোটে ২২ রান তুলতে পারা সফরকারীরা পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে সফল শেখ মেহেদী হাসানও। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া টম লাথামকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে আউট করেন তিনি। ২১ রান করে সাজঘরে কিউই অধিনায়ক। উইল ইয়াং একপ্রান্ত আগলে রেখে খেললেও অপর প্রান্ত থেকে তার সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আবার সাফল্য পান নাসুম। নিজের স্পেলের চতুর্থ ও শেষ ওভার হাত ঘুরাতে এসে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। পরপর দুই বলে ফেরান হেনরি নিকোলস (১) ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (০)। হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল এই স্পিনারের সামনে তবে নতুন ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল লাফিয়ে ওঠা বলটি ব্যাট না বাড়িয়েই ছেড়ে দেন। এতে চার ওভারে দুই মেডেনে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নাসুমের।
পরের চিত্রনাট্য লিখেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের ১৬তম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই ব্লান্ডেলকে সাজঘরে ফেরান তিনি। মিডঅনে থাকা নাঈম শেখের দারুণ ক্যাচে ১০ বলে মাত্র ৪ রান করে আউট হন এই ব্যাটসম্যান। একই ওভারের শেষ বলে কোল ম্যাককঞ্চিকে নিজের বলে নিজেই দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরান। পরে ইনিংসের শেষ ওভারে পর পর দুই বলে আরও দুই উইকেট পান মুস্তাফিজ।
ইয়াংকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন বাঁহাতি পেসার। ৪৮ বলে ৪৬ রানের লড়াকু ইনিংস আসে ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে। পরের বলে ব্লেয়ার টিকনারকে তুলে নিলে অলআউট হওয়া নিউল্যান্ডের ইনিংস থেমেছে মাত্র ৯৩ রানে। জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯৪ রানের। নাসুমের পাশাপাশি এ ম্যাচে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও নেন সমান ৪ উইকেট। ৩ ওভার ৩ বল থেকে তিনি খরচ করেন ১২ রান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।