মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী মোঃ কামাল হোসেন’র সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামীদের পক্ষে জেরা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার ৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
ঘটনার দিন এপিবিএন এর চেক পোস্টে মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের গাড়ি থামানোর সাথে সাথে মোঃ কামাল হোসেনের সিএনজি গাড়ি চেকপোস্টে এসে থামে। মোঃ কামাল হোসেন সিএনজি চালক। সাক্ষ্য প্রদানকালে তিনি পুরো হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছেন বলে আদালতে জবানবন্দী দেন। সাক্ষী মোঃ কামাল হোসেন টেকনাফের শামলাপুরের মৃত সৈয়দ হোসেনের পুত্র।
আসামীদের পক্ষে এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট দিলীপ দাশ, এডভোকেট শামশুল আলম, এডভোকেট মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি) এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট চন্দন দাশ, এডভোকেট এম.এ বারী, এডভোকেট ওসমান সরওয়ার শাহীন, এডভোকেট মোশাররফ হোসেন শিমুল প্রমুখ সাক্ষী মোঃ কামাল হোসেনকে জেরা করেন। আগামী ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বরও এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা করা হবে।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট থেকে পর পর তিন দিন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামীদের পক্ষে জেরা শেষ করা হয়। গত রোববার ৫ সেপ্টেম্বর মোঃ আলী’র সাক্ষ্য গ্রহণ, জেরা সম্পন্ন করা হয়। এনিয়ে মোট ৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন করা হলো।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির জানান-৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য চার্জশীটের ৩ থেকে ৬ নম্বর সাক্ষী ৪ জন, ৬ সেপ্টেম্বর চার্জশীটের ৭ থেকে ১০ নম্বর সাক্ষী, ৭ সেপ্টেম্বর ১১ থেকে ১৩ নম্বর সাক্ষী এবং ৮ সেপ্টেম্বর ১৪ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির থাকার জন্য সমন জারি করা হয়েছিলো। সাক্ষীরা যথারীতি আদালতে উপস্থিত থাকলেও আসামীদের পক্ষে সাক্ষীদের দীর্ঘ জেরার কারণে সমন দেওয়া সকল সাক্ষীদের সাক্ষ্য নির্ধারিত দিনে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানান-সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির।
সোমবার সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় কারাগার থেকে এনে আদালতে যে ১৫ আসামিকে হাজির করা হয়, তারা হলো : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া।প, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) সন্তোষ বড়ুয়া সিবিএন-কে জানান, এ মামলায় ৮৩ জন চার্জসীট ভুক্ত সাক্ষী রয়েছে। চলতি বছরের গত ২৭ জুন ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/ ১১৪/১২০-খ/ ৩৪ ধারায় সকল আসামীর উপস্থিতিতে মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষী সহ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।