এস.এম.জুবাইদ, পেকুয়া:
মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার দিন দিন কমে গেলে বেশ জমে উঠছে আসন্ন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউপি নিবার্চন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৭ জন প্রার্থী থাকলেও ভোটারদের মাঝে উঠে এসেছে মূল ৩ জন প্রার্থীর নাম এরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহিদুল্লাহ বিএ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান জেট এম মোসলেম উদ্দিনের নাম। এ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশন কতৃক ঘোষিত আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু আলোচিত ও সমালোচিত টইটং ইউপির নির্বাচন। এ নির্বাচনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে বহিস্কৃত চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি লড়ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার আগেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বললেও সব উল্টেপাল্টে গেল তাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর। এরপরই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নামেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. শহিদুল্লাহ বিএ।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম এ প্রতিবেদককে বলেন মো. শহিদুল্লাহ বিএ কাগজে-কলমে আওয়ামী লীগ হলেও তাঁর অতীত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি সব সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই নির্বাচনের মাঠে কাজ করেছেন। গত ইউপি নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাহেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। এবারও তিনি একই কাজ করছেন। এতে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ চরম বিব্রত। আমি বলব, তিনি আওয়ামী বিরোধী শক্তির একজন এজেন্ট। তাঁকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য দলের হাই কমান্ডে সুপারিশ পাঠানো উচিত।
নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রতিবেদক কে বলেন সবাই মিলে নির্বাচন করলে আমার বিজয় ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। আমার জনপ্রিয়তা আছে বলে আমি মাঠে নেমেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি শতভাগ বিজয় নিশ্চিত। বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে আপনি কোন চিন্তা করছেন কিনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ওনি গতবারও আমার সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন এতে তিনি পরাজিত হন। এবারও প্রার্থীতা করছেন। দলীয় হাইকমান্ড ওনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শহিদুল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। টৈটংয়ের মানুষ চাইলে আমি চেয়ারম্যান হব। এর আগেও আমি দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমি দলের বিপক্ষে নই, টৈটংবাসীর অধিকার আদায় ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নির্বাচনে লড়ছি।
এদিকে সারাদেশে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি ইউপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে বলে একক প্রার্থী নিয়েই টৈটং ইউপি নির্বাচনে থাকছে বিএনপি। ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁরা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোসলেম উদ্দিনকে প্রার্থী করেছেন।
উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবেক এমইউপি শাহাদাত হোসেন মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে দল নির্বাচনে না আসলেও দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকতে হবে আমাদের। তাই উপজেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের পরামর্শ ও সুপারিশক্রমে আসন্ন টৈটং ইউপি নির্বাচনে মোসলেম উদ্দিনকে সমর্থন দিয়ে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (চশমা প্রতীক) বিএনপি নেতা জেটএম মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘দলের এই দুঃসময়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। আমরা সে পথেই আছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের নির্দেশনায় আমি একক প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলেই টৈটংয়ে আমরাই বিজয়ী হব। বর্তমান টৈটং ইউনিয়ন বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ।
পেকুয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও সদর ইউপির চেয়ারম্যান এম বাহাদুর শাহ বলেন, ‘টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত আর মোসলেম দুজনেই আমাদের দলের নেতা। তাঁরা নিজেরা আলোচনা করে একজন অন্যজনকে ছাড় দিয়েছেন। তাঁদের এ সিদ্ধান্ত আমাদের বিজয় আরও সহজ করে দিয়েছে। তবে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য কারও প্রতি কোনো চাপ ছিল না।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী বন্ডবেন্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নূরুল আমিন (মোটরসাইকেল) তিনি বলেন আমরা এখনো আতংকিত হুড় করে আবার কোন নির্বাচন স্থাগিত হয়ে যাবে কিনা। ভোটারা এখনো আশংকিত যে ভোট সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভাবে হবে কিনা। নাকি ক্ষমতাশীন দলের মনোনীত প্রার্থী ভোট কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনের ফলাফল ওনার পক্ষে নিয়েই যাবে।
এ ছাড়াও এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী শামিমা নাছরিন সায়মা (টেলিফোন), ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন (আনারস), ইসলামী আন্দোলনের সাহাব উদ্দিন (হাতপাখা)।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রার্থীরা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে এলাকার পাড়া-মহল্লায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের শ্লোগান। প্রার্থীরা ভোটারদের ধারে ধারে গিয়ে দোয়া ও সমর্থন কামনা করছেন এবং সাথে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এখন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় চলছে নির্বাচনী আমেজ চলছে প্রার্থীদের অতীত ভবিষ্যৎ নিয়ে চুলছেড়া আলোচনা ও সমলোচনা। এমনকি চায়ের দোকানে চায়ের কাপেও নির্বচনী ঝড় তুলে প্রার্থীর সমর্থকরা। অনেকই বলছে যে প্রার্থীগুলো হাটলাইনে উঠে এসেছেন তারা বিগত সময়ে ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েছিল। কার আমলে কি উন্নয়ন হয়েছে এলাকায় তাও উঠে এসেছে এ নির্বাচনের ভোটারদের মাঝে। এদিকে ভোটরা মনে করেন যোগ্য প্রার্থী কে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে এলাকায় উন্নয়ন হবে। এ নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজকে প্রধান্য দিচ্ছেন ভোটরা।
ভোটররা জানিয়েছেন, এ নির্বাচন নিয়ে তারা এখনো সংকিত। কারণ করোনার জন্য কয়দফা এ নির্বাচন স্থাগিত হয়ে যায়। আবার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আমরা আশা করি এ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে ও সংকিত। আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে যথাযথ ভাবে ভোট দিতে পারবো কিনা। আমরা চাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য নির্বাচন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, টৈটং ইউপি নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে। এ ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৬১২ জন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইরফান উদ্দিন জানান আমরা এ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভাবে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবো। আমি প্রার্থীদের নিদের্শ দিয়েছি কেউ যাতে আচরণ বিধি লঙ্গন না করতে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।