মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদ আলী’র সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামীদের পক্ষে জেরা সম্পন্ন হয়েছে। রোববার ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ দ্বিতীয় দফায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

গত ২৫ আগস্ট থেকে পর পর তিন দিন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামীদের পক্ষে জেরা শেষ করা হয়।

রোববার ৫ সেপ্টেম্বর সকালে আদালতের কার্যক্রমের প্রারম্ভে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শুরু হয়। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৪ দিন সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। সোমবার ৬ সেপ্টেম্বর টেকনাফের শামলাপুরের মৃত লাল মিয়ার পুত্র ফিরোজ আহমদ এর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির জানান-রোববার ৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য চার্জশীটের ৩ থেকে ৬ নম্বর সাক্ষী ৪ জনকে সমন দেওয়া হয়েছিলো। যাদের সমন দেওয়া হয়েছে তারা হলেন-টেকনাফের মিনা বাজারের কাজি ঠান্ডা মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী, টেকনাফের শামলাপুরের ডা. মৃত ফজল করিমের পুত্র আবদুল হামিদ, শামলাপুরের নুরুল ইসলামের পুত্র মোঃ ইউনুস এবং শামলাপুরের মৃত লাল মিয়ার পুত্র ফিরোজ আহমদ। এছাড়া, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চার্জশীটের ৭ থেকে ১০ নম্বর সাক্ষী, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ১১ থেকে ১৩ নম্বর সাক্ষী এবং ৮ সেপ্টেম্বর ১৪ থেকে সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির থাকার জন্য সমন জারি করা হয়েছে বলে জানান-সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির।

রোববার সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় কারাগার থেকে এনে আদালতে যে ১৫ আসামিকে হাজির করা হয়, তারা হলো : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া।প, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) সন্তোষ বড়ুয়া সিবিএন-কে জানান, এ মামলায় ৮৩ জন চার্জসীট ভুক্ত সাক্ষী রয়েছে। চলতি বছরের গত ২৭ জুন ফৌজদারী দন্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/ ১১৪/১২০-খ/ ৩৪ ধারায় সকল আসামীর উপস্থিতিতে মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষী সহ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।