চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভাড়াটে ভূমিদস্যু কর্তৃক  ব্লু ভিউ কো-অপারেটিভ সোসাইটির জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ।

এসময় ভূমিদস্যুরা সোসাইটির নাইটগার্ড মো. সেলিমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোসাইটির সড়ক গুড়িয়ে দেন।

গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে সীতাকুন্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায়ে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ব্লু ভিউ কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, গত রাতে স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামক প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তা রবিউল হক ও মমতাজ এর নির্দেশে কথিত যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম দিদার ও তার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাইট গার্ডকে বেঁধে সোসাইটির জমিতে প্রবেশ করে জমির দখল চেষ্টা করেন। এসময় তারা সমিতির নিজস্ব জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা ও সড়ক এসকেভেটর দিয়ে একে একে গুঁড়িয়ে দেন।

জানা যায়, ভূমিদস্যু হিসেবে ঐ এলাকায় কুখ্যাত এই দিদার বহিনী। এই বাহিনী মূলত ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে জোর করে জমি দখলের কাজ ও ভূমিদস্যু হিসাবে খ্যাত।

ব্লু ভিউ কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ নিয়ে দিদার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা আমাদের জায়গায় এসে বহুবার হুমকি দিয়ে গেছে। গতরাত সাড়ে তিনটায় স্পেকট্রার রবিউল হক ও মমতাজ এর নির্দেশে এসকেভেটর দিয়ে আমাদের তৈরি করা সড়ক ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়।’

সভাপতি আরো বলেন, এসময় তাদের জমি পাহারায় থাকা নাইটকগার্ড সেলিমকে বেঁধে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে গুড়িয়ে যাবার সময় তারা জেনারেটর ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এবিষয়ে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথাও জানান।

ওদিকে স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল কতৃপক্ষের মুখপাত্র রবিউল হক বলেন, ‘আমরা বায়েজিদের ওই বিটে কাজ করতাম সেটা সত্য। তবে এখন কাজ বন্ধ। আর কে বা কারা কো-অপারেটিভ সোসাইটির জমি দখল করেছে তা আমার জানা নেই।’

অভিযুক্ত কথিত যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম দিদার বলেন,
‘আমরা গত ৪/৫ বছর যাবৎ ওই জায়গায় বালি ভরাট করছি। আমাদের জায়গায় সড়ক তৈরি করেছে। লিখিত অভিযোগ যেহেতু দিয়েছে বসে সমাধান হবে।’

ছলিমপুরবাসী জানান, এই বাহিনীকে ব্যবহার করেই স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল জমি দখল করে নেয়। এটি একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র। এদের বিরদ্ধে এলাকায় বহু মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। তবুও ভূমিদস্যু চক্র থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। স্থানীয় প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ ছাড়া প্রভাবশালী এই ভূমিদস্যুদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে পেশাদার ভূমি সন্ত্রাসী চক্র। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দখল করে নেয় নিরীহদের জমি। এ দখলকে কেন্দ্র করে শহরের বায়েজিদ,চন্দ্রনগর, শেরশাহ, শ্যামলী আবাসিক ও পলিটেকনিক্যাল এলাকায় প্রায়ই ঘটছে গোলাগুলি, সন্ত্রাস, এমনকি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত। এদের গ্রুপে রয়েছে নানা অপরাধী ও হত্যা মামলার সব ভয়ংকর আসামিরা।

ফৌজদার পুলিশ ফাঁড়ির তৌহিদুল করিম বলেন, ‘অভিযোগ আগে থেকে ছিলো দুপক্ষের। কাগজপত্র দেখে বসার কথা। হয়তো গতরাতে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’

উল্লেখ্য, পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের অপরাধে গত ২ ফেব্রুয়ারি একই সড়কের পাশে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর মৌজায় পাহাড় কেটে হ্রদ ভরাটের দায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রাকে ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মোয়াজ্জম হোসাইন।