মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এলাকায় ডলু খাল থেকে জিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের এক সিন্ডিকেট ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ক্রমাগত বালু উত্তোলনের ফলে ডলু খালের তীরবর্তী জনবসতি ও খালের উপর স্থাপিত নলুয়া-আমিলাইষ ইউনিয়নের সংযোগ সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর গা ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে সেতুর পিলার ধ্বসে গাডার ভেঙ্গে দীর্ঘ কয়েক মাস নলুয়া-আমিলাইষ-মৌলভীর দোকান সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ওই সড়কে যোগাযোগকারী লক্ষাধিক মানুষের দূর্গতি চরম আকার ধারন করলে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সেতুটি মেরামত করে কোন রকমে চলাচল উপযোগি করে দেয়।
অপরদিকে সরকারীভাবে নদীর বালু মহাল ইজারার মাধ্যমে জিয়া এন্টারপ্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান বৈধভাবে বালু উত্তোলনের দাবী করলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে সেতুর নীচ থেকে এবং জনবসতি, ফসলি জমি ও কবরস্থান এলাকা থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছে। ইজারার কার্যাদেশে সেতু এলাকা থেকে ১ হাজার ফুট দূর এবং জনবসতি ও ফসলি জমি এলাকা হতে বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও উক্ত সিন্ডিকেট তা’ মানছে না। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে ওই সিন্ডিকেট ডলু খালের নলুয়া এলাকা থেকে শুরু পার্শ্ববর্তী আমিলাইষ ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা হতে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছে। ফলে খালের দু’তীর ধ্বসে ইতোমধ্যে ২০ পরিবারের বসত ভিটে বিলীন হয়ে যায়। ফলে তারা খোলা আকাশের নীচে গাছ তলায় তাঁবু টেনে মানবেতর দিনাতিপাত করছে। শুধু তাই নয়, নির্বিচারে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে আমিলাইষ এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক প্রায় শত মিটার ধ্বসে গেছে। এছাড়া যে কোন সময়ে আবার ভেঙ্গে পড়তে পারে নলুয়া-আমিলাইষ সংযোগ সেতুটি। এলাকার বৃদ্ধ ফোরকান আহমদ, আবু তাহের, নুর আয়েশা, রহিমা খাতুন, আবদুল আলীম জানান, এখনই যদি ডলু খাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হয় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অবশিষ্ট কবরস্থান, ২৭ পরিবারের বসত ভিটে খালের পেটে বিলীন হয়ে যাবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ জিয়া এন্টারপ্রাইজ শুধু নিজে বালু উত্তোলন করছে না ইজারার দোহাই দিয়ে এলাকার মিনহাজ নামের আরেক ব্যক্তিকে দিয়ে এবং পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ও বশরত নগর এলাকার বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার মালিকদের এনে একাধিক স্পট থেকে সমানতালে বালু উত্তোলন করাচ্ছে।
বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে বালু ও ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে চন্দনাইশ এলাকার একটি ড্রেজার মেশিনসহ বোট কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এদিকে এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ইজারার স্থান নির্ধারন করে উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) উপজেলা ভূমি অফিসকে নির্দেশ প্রদান করেন। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রহস্যজনক কারনে অভিযোগকারী এলাকাবাসীকে কোন ধরনের নোটিশ ব্যতিরেখে অভিযুক্তদের নিয়ে ইজারাস্থান পরিমাপ করে চলে যান। এলাকাবাসী এখনো জানেন না ইজারার স্থান হিসেবে খালের কোন জায়গাটি নির্ধারন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মহিউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য ইজারার স্থান পরিমাপ করে নির্ধারন করা হয়েছে। সেতু থেকে ১ হাজার ফুট দূরে এবং কবরস্থান, বসতভিটে ও ফসলি জমি এলাকায় বালু উত্তোলন করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, অভিযোগকারীরা আমার অফিসে আসলে তাদেরকে পরিমাপের ট্রেস ম্যাপ দেয়া যাবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ইতোমধ্যে আমি ওই এলাকায় একটি অভিযান করেছিলাম এবং জরিমানাও করা হয়েছে। আমরা ভাঙ্গনের বিপক্ষে। তাছাড়া আমি এখানে যোগদান করেছি অল্প কিছুদিন হচ্ছে সবকিছু হয়ত আমার অবগত নাও থাকতে পারে। আমি যতটুকু জানি ইজাদারদের কার্যাদেশ অনুযায়ী জায়গা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে কেউ বালু উত্তোলন করলে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ইজারা বাতিলের জন্য উর্ধ্বতন মহলে সুপারিশ করা হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।