নিজস্ব প্রতিবেদক:
উখিয়া সদর দারোগা বাজার এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জায়গায় চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র ঐতিহ্যবাহি এই শ্মশানের জায়গায় অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে আসছে। এতে করে ওই এলাকায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির হওয়ার আশংকা করছেন শ্মশান কমিটির নেতৃবৃন্দরা।

এদিকে গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ জেলা প্রশাসক বরাবরে  উক্ত নির্মাণ কাজ বন্ধে লিখিত আবেদন করেছেন উখিয়া দারোগা বাজার সমাজ শ্মশান ভৈরব ও দূর্গা মন্দির উন্নয়ন-পরিচালনার কমিটির নেতৃবৃন্দরা। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২ সেপ্টেম্বর উখিয়া সদর দারোগা বাজার এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জায়গায় অবৈধ দখলকারী কর্তৃক পাকা স্থাপনা নির্মাণ করায় বাঁধা দিলে আইন শৃংখলার অবনতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার আশংকায় জরুরী ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (রাজস্ব) থেকে। যার স্মারক নং-০৫.২০২২০০.১২৮.৪০.০৪৪.২০২১-৭২৪, তাং-০২/০৯/২০২১ইং।

জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করা আবেদনে উখিয়া দারোগা বাজার সমাজ শ্মশান ভৈরব ও দূর্গা মন্দির উন্নয়ন-পরিচালনার কমিটির সভাপতি মৃদুল আইচ ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রতন কান্তি দে দাবী করেন, উক্ত শ্মশানে ২’শ বছরের অধিককাল সময় ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মারা গেলে তাদের সৎকার কার্য সম্পাদন হয়ে আসছে। তাছাড়া এই জায়গাটি সরকারী খাস জমি হিসেবে শ্মশানের নামে আর.এস, বি.এস খতিয়ানে রেকর্ড আছে। কিন্তু দীর্ঘকাল সময় ধরে কিছু ভূমিদস্যু শ্রেণীর ব্যক্তি শ্মশানের চারদিকের অধিকাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করার কারণে শ্মশানের জমি ছোট হয়ে আসছে। অবৈধ দখলকারীরা এই জমির উপর অনুমোদন বিহীন বহুতল ভবন নির্মাণ করছে।

ইতিপূর্বে অনেকবার চেষ্টা করেও তাদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি নানা কারণে। এরপর ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরাবরে এই বিষয়ে উচ্ছেদের আবেদন করা হলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কানুনগো ও সার্ভেয়ার দ্বারা শ্মশানের জমি সরেজমিন পরিমাপ করে দখলকারীদের চিহিৃত করার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তৎকালীন ইউএনও একটি উচ্ছেদ মামলা রুজু করেন। যার উচ্ছেদ মামলা নং-২-০৭/০৮।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অবৈধ দখলকারীদের শ্মশানের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তৎকালীন ইউএনওকে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করে আদেশ দেন। অথচ প্রায় ৭/৮ বছর ধরে উচ্ছেদ মামলাটি ইউএনও ও এসিল্যান্ড কার্যালয়ে ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

এদিকে ২০১৯ সালে দুর্গাপূজার আগে দখলকারীরা শ্মশানের জায়গা থেকে ১০/১৫টি গাছ কেটে নিয়ে গেলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারীরা। পরে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হলে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে এক সমাবেশে উপজেলা চেয়ারম্যান সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দুর্গাপূজা সম্পন্ন করেন। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় একাধিক বৈঠকেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে বর্তমানেও শ্মশানের জায়গায় অবৈধ অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে ভূমিদস্যু শাহাব উদ্দিন গং।

এদিকে চলতি বছরের ২১ মার্চ উখিয়ার শত শত নারী-পুরুষ শান্তির্পূণ সড়ক অবরোধ ও সমাবেশের মত কর্মসূচি পালন করেন। এসময় এসিল্যান্ড আমিনুল এহসান খাঁন ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ ও উচ্ছেদ মামলা কার্যকরের ঘোষণা দিলে উক্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে কয়েকদিন নির্মাণ বন্ধ থাকলেও তা আবারো শুরু করেছে শাহাব উদ্দিন গং।

সর্বশেষ ২৯ আগস্ট থেকে পুরোদমে শ্মশানের জায়গায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও চেয়ারম্যানের আদেশ অমান্য করে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভূমিদস্যু শাহাব উদ্দিন গং।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, উখিয়ার দারোগা বাজার এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় আইন শৃংখলার অবনতি হতে পারে এমন একটি চিঠি জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়ার পর থেকে সেখানে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যদি কেউ প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে কাজ চালায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে উখিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সধারণ সম্পাদক এডভোকেট রবীন্দ্র দাশ রবি উক্ত ঘঠনায় উখিয়ার পুরো হিন্দু সমাজ উদ্বেগে আছে বলে জানান।