এস এম জোবাইদ, পেকুয়া (কক্সবাজার) :

কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামার দুই গ্রাম বাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পৃথক পৃথক দুইটি মামলায় এবং হামলায় গ্রেপ্তার আতংঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে এলাকা। এমনকি হামলা ও গ্রেপ্তার আতংঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মহিলারাও। তাদের এলাকা জুড়ে সুনশান নিরবতা অনুভূব  হচ্ছে। মগনামা ইউনিয়নের অতি প্রাচীনতম বাজার মহুরীপাড়া বাজার। এতদিন ছিল মানুষের আনাগোনা। এমন মহামারীতে ও আনা গোনা কমেনি এ বাজারে। কিন্ত সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের দুই ভাইয়ের উপর হামলার ঘটনায় এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পৃথক পৃথক দুইটি মামলায় আতংঙ্কে সন্ধ্যা নামতেই পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের মুহুরিপাড়ার এ বাজারে কমে যায় মানুষের আনাগোনা। মানুষের আনাগোনা না থাকায়  নিস্তদ্ধ হয়ে যায় পুরো বাজার ও এলাকা। ফলে বাজারের প্রায় সকল দোকানে তালা দিয়ে দেয়  ব্যবসায়ীরা।

এ স্টেশন পেরিয়ে একটু ভিতরে গ্রামে ঢুকতেই দেখা যায় ভুতুড়ে পরিবেশ। ঘরের বাইরের আলো নিভিয়ে ভেতরে অবস্থান করছেন মানুষ। চারদিকে সুনসান নীরবতা।

এমন দৃশ্যের দেখা মেলে মুহুরিপাড়া গ্রামে। গ্রেপ্তার-আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে মুহুরিপাড়া ও এর পাশের মগঘোনা গ্রাম। গ্রাম দুটির মহিলারাও রয়েছেন গ্রেপ্তার ও হামলার আতঙ্কে।

মুহুরিপাড়ার বাসিন্দা এবং মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংবাদকর্মী মোহাম্মদ হাসেম বলেন, তাঁর স্ত্রী, অসুস্থ ভাই ছাদেক, ভগ্নিপতি ও চট্টগ্রামের স্কুল কলেজপড়ুয়া দুই ছেলে মোহাম্মদ আরমান এবং মোহাম্মদ আরিফসহ ছয়জনকে চেয়ারম্যানের মামলা ও পুলিশের মামলায় আসামি করা হয়েছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মমতাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বেশ কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক কাজে এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছি। কিন্তু পুলিশের ওপর হামলা ও ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ভাইদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় আমাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আমি এলাকায় না থেকেও মামলার আসামী হয়েছি।

ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রুকন উদ্দিন বলেন, ‘আমার স্ত্রী, বড় ভাই, বড় ভাবী, আপন দুই বোন, এক ভগ্নিপতিসহ মোট ছয়জনকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল জলিল বলেন, তাঁর একমাত্র ছেলে আশেক বিন জলিলকে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামাদের গ্রেপ্তারের ভয়ে এখন এলাকায় পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাজেম উদ্দিন নাজু অভিযোগ করে বলেন প্রতি রাতেই পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের অনুসারীরা মুহুরিপাড়া ও মগঘোনার প্রতি ঘরে আসামি ধরার নামে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছেন। আমাকে ওই দিন ওয়াসিম চেয়ারম্যানের অনুসারীরা ধরে পুলিশকে সোপর্দ করে। আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছিল আমি আইনের মাধ্যমে মুক্তি পায়।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল এনাম বলেন, ‘পুলিশ চেয়ারম্যান ওয়াসিমের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিরীহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এবং বর্তমানে হুমকি ধমকিতে এলাকার লোকজন এলাকা ছাড়া হয়ে গেছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম বলেন, ‘অপরাধীদের আমি আইনের মাধ্যমে মোকাবেলা করছি। আমি বা আমার কোনো লোকজন কাউকে আক্রমণ করেনি। কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানি মুলক মামলাও দেইনি।

পুলিশের করা মামলার বাদী এসআই খায়ের উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আসামি তালিকা তৈরিতে বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি বা জনপ্রতিনিধির সহযোগিতা নেওয়া হয়নি। ঘটনার সময় ধারণকৃত স্থিতচিত্র ও ছবি এবং ভিডিওচিত্র দেখে আমরা নিজেরাই করেছি তালিকা।

এ প্রসঙ্গে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত কানন সরকার বলেন, ‘মামলায় কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে যদি আসামি করা হয়, তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগপত্র থেকে নিরহ ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হবে।