মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):
বৈশ্বিক মহমারি করোনায় সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় বন্ধের সুযোগকে পুরোভাগে কাজে লাগাছে আলীকদম উপজেলায় শিক্ষা অফিস ও বেশীরভাগ শিক্ষক। স্লিপের টাকা দিয়ে ওয়ার্কশীটের ফটোকপি বিতরনে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এ উপজেলায় বালাই নেয়। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা অফিসারকে অভিযোগ করেও প্রতিকার হয়নি। বরং অভিযোগের বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে খোদ শিক্ষা অফিসাররা!

জানা গেছে, করোনার ছোবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পাহাড়ি উপজেলা আলীকদমের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। টানা ২৬ মাস ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরফলে দেশের অন্যান্য উপজেলার ন্যায় চরম ক্ষতির শিকার আলীকদমের ৫০টি সরকারি প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়।

বৈশ্বিক মহামারি কারোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের ন্যায় আলীকদমের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সরকার সংসদ টেলিভিশন, বেতার ও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এ ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় থেকেও জারী করা হয় নানান পরিপত্র ও নির্দেশনা। কিন্তু গত ২৬ মাসে আলীকদম উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ২৬ জন শিক্ষককেও অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাসে উদ্যোগী করাতে পারেনি। হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষা অফিসের কোনপ্রকার প্রণোদনা ও উৎসাহ ছাড়াই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখলেও এখন তাও আর নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত অর্থবছরে স্লিপের টাকা বরাদ্দ পায় উপজেলা ৩১ বিদ্যালয়। স্লিপের টাকা থেকে ‘বিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা ২০২১’ এর ফটোকপি করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ওয়ার্কশীট বিতরণ করার সরকারি নির্দেশনা ছিল।

কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসের গাফেলতির কারণে সঠিক সময়ে সরকারি নির্দেশনার এ তথ্যটি পাননি প্রধান শিক্ষকরা। ফলে প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় প্রধান শিক্ষকরা কাগুজে-কলমে হিসাব সমন্বয় ও ভাউচার তৈরী করে শিক্ষা অফিসে জমা দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা জানান, তাদের ছেলে মেয়েরা এ পর্যন্ত মাত্র একবার ওয়ার্কশীট পেলেও দ্বিতীয়বার ওয়ার্কশীট পায়নি। এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করেও সুরাহা হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার মহাজন স্কুল পর্যায়ে সরকারি নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নে উদাসীন। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা অফিসের কেরানীদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম। সেখানে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঠুঁটু জগন্নাথ।

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে উপজেলার সকল প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা তৈরী হচ্ছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েকজন শিক্ষককে। এ তালিকায় নাম উঠাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিভিন্ন অভিযোগে এবং আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার কারণে সাময়িক বহিস্কার হওয়ার শিক্ষকরাও। সাময়িক বহিস্কার হওয়ার শিক্ষকদেরও গ্রেডেশন তালিকায় নাম উঠানো এবং সরকারি অন্যান্য ভাতাদির সুবিধা দিতে হিসাব সংরক্ষণ অফিস ও শিক্ষা অফিস পরস্পরকে অবৈধ সহযোগিতার পাঁয়তারা করছে।

বহিস্কার হওয়া শিক্ষকদের নীতিমালা বহির্ভূত সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার নওশাদ জানান, ‘মামলা ও অভিযোগের ভিত্তিতে কোন কোন শিক্ষক বহিস্কার আছেন তার কোন আদেশের কপি পাইনি। তবে তিনজন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে অর্ধেক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। শিক্ষা অফিস প্রস্তাব না করলে সাময়িক বহিস্কৃত কোন শিক্ষককে অনৈতিক সুবিধা দিবে না আমার অফিস।’

জানতে চাইলে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোসাব্বির হোসেন খান বলেন, আমি এখন উপজেলা পরিষদে একটি মিটিংয়ে আছি। খোঁজ নিয়ে অভিযোগগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। অন্যান্য তথ্যের বিষয়ে রেকর্ড দেখেই জানাবেন বলেন।