ডেস্ক নিউজ:
১৬ বছর বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্মগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করতে যাচ্ছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে অন্যান্য বারের মতো তথ্য সংগ্রহে কমিশনের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তাদের আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি অনলাইনে নিবন্ধিত হওয়া যাবে। এরপর বায়োমেট্রিক সম্পন্ন হলেই নাগরিকদের এনআইডি দেয়া হবে।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার বৈঠকে বসছে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির ৮৪তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের এজেন্ডায় ১ জানুয়ারি ২০০৬ সাল বা তার আগে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহকরণের বিষয়টি রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি নির্বিঘ্ন রাখার অংশ হিসেবে ইসি নাগরিকদের এনআইডি প্রদানের আওতায় বাড়াতে চায়। এক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৮ বছরের স্থলে বয়স ২ বছর কমিয়ে ১৬ বছর বয়সীদের এনআইডি দিতে চায়।

সরকার কোভিড-১৯ এর কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল নাগরিককে ভ্যাকসিন প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে করেছে। কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র অপরিহার্য।

কমিশন মনে করছে সরকার পর্যায়ক্রমে সকল নাগরিকগণকে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসবে, সেক্ষেত্রে এনআইডি না থাকার কারণে ১৮ বছরের কম বয়স্ক নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। যে কারণে ভবিষ্যতে নাগরিকদের যাতে টিকা নিতে বেগ না হয় তার কারণে নির্বাচন কমিশন ১৬ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করে এনআইডি দেওয়ার চিন্তা করছে। নির্বাচন কমিশন পর্যায়ক্রমে আরও কম বয়সীদের এনআইডি দেওয়ার পথে এগুবেও বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০ অনুযায়ী যে কোনও বয়সী নাগরিকদের পরিচয় পত্র দেওয়ার বিধান রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ ২০১৯ সালে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ওই সময় ভোটার হওয়ার উপযোগী (১৮ বছর) নাগরিকের পাশাপাশি ১৬ বছর বয়সীদের (১ জানুয়ারি ২০০৪ বা তার আগে জন্মগ্রহণকারী) আগাম তথ্যও সংগ্রহ করেছিল ইসি। ২০১৯ সালে সংগৃহীত তথ্য থেকে ২০২০ সালে ৬৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮২৫ জন এবং ২০২১ সালে ১৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৬ জন নাগরিকের তথ্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়েছেন।

 

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্মগ্রহণকারী নাগরিকদের নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য দুইমাস ব্যাপী তথ্য সংগ্রহ করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা সম্ভাব্য সময় হিসেবে আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসকে বিবেচনায় রেখেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা আগের মত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে না। যার কারণে তাদের তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগের দরকার পড়বে না। নাগরিকরা উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে নিবন্ধিত হবেন। অনলাইন/অফলাইনে আবেদন করতে পারবেন। নিবন্ধিত নাগরিক এসএমএস এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সময়সূচী অনুযায়ী বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মনির প্রতিচ্ছবি) তথ্য প্রদান করবেন। নিবন্ধিত সকল নাগরিককে বায়োমেট্রিক ম্যাচিং হলে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় পত্র অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) নুরুজ্জমান তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি কমিশন সভায় তোলা হবে। সরকার করোনার টিকার আওতা ক্রমান্বয়ে বাড়াচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও কমবয়সীদের টিকার আওতায় আনতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন পড়বে। এই বিষয়টি চিন্তা করে তারা ১৮ বছরের কম বয়সীদের এনআইডি দেওয়ার জন্য কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। কমিশন চূড়ান্ত করলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

গত বছর (২০২০) নভেম্বরে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) অনুমোদন দেয় একনেক। ওই প্রকল্পে ১০ বছর তা তদূর্ধ্ব নাগরিকদের এনআইডি প্রদানের কথা রয়েছে।