সিবিএন ডেস্ক:
মিয়ানমার থেকে দীর্ঘদিন ধরেই আসছে ইয়াবা। সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে আইস। অত্যন্ত মূল্যবান এই মাদক নানা উপায়ে রাজধানীতে নিয়ে আসছে মাদক চোরাকারবারী চক্রের সদস্যরা।

৫০০ গ্রাম আইস ও ৬৩ হাজার ইয়াবাসহ মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসা একটি চক্রকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। পৃথক অভিযানে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ ২৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আইস মাদকসেবীদের কাছে ক্রিস্টাল মেথ বা ডি মেথ নামে পরিচিত। এটি একটি স্নায়ু উদ্দীপক মাদক। আইস অত্যন্ত ভয়াবহ উত্তেজনাকর ও গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ ব্যয়বহুল মাদক। এটি গ্রহণের ফলে হরমোনাল উত্তেজনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় মাদকসেবী।

বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে আইস ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নাজিম উদ্দিন, আব্বাস উদ্দিন, নাছির উদ্দিন, শিউলি আক্তার, কোহিনুর বেগম, সানজিত দাস ও হোসেন আলী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম আইস, ৬৩ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।

পৃথক অভিযানে মিরপুর গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাশিদা বেগম ও মৌসুমী আক্তার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার সঙ্গে অত্যাধুনিক মাদক আইসের (ক্রিস্টাল মেথ) মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল মাদকও চোরাচালান হচ্ছে। এই মাদকটি প্রথমে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে আসে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় একটি প্রাইভেটকারে আনলোড করে ঢাকায় প্রবেশ করে। ইয়াবার মতো মাদকটি সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে গোয়েন্দা পুলিশ মাদকটি প্রবেশে কঠোর হবে।

হাফিজ আক্তার বলেন, আইস বিত্তবান পরিবারের বখাটে সন্তানরা নিয়ে থাকে। মূলত সিসা লাউঞ্জে সেবনকারীরা এসব মাদক নিয়ে থাকেন। আইস অত্যন্ত মারাত্মক উত্তেজনাকর ও ব্যয়বহুল মাদক। এটি গ্রহণে হরমোনাল উত্তেজনা স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা এসব অভিজাত এলাকায় এই মাদক সেবনের পরিমাণ বেশি। এই মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে, লকডাউনের কারণে অনেকদিন ধরে তাদের মাদক ব্যবসা মন্দা ছিল। লকডাউন শেষে তারা অত্যাধুনিক মাদক আইস ও ইয়াবা ট্যাবলেট কক্সবাজার থেকে কিনে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে। মোংলা বন্দর উদ্দেশ্যে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বহনকারী একটি ট্রাকের মাধ্যমে এগুলো তারা চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় নিয়ে আসে। এরপর প্রাইভেটকারে আনা হয় ঢাকায়।

ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃত সবার বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে।

এই চক্রটি কতদিন ধরে কাজ করছে এমন প্রশ্নে ডিবি প্রধান বলেন, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অনেকবার এই মাদকসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। আমরাও এই চক্রটিকে গ্রেপ্তার করেছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আইস খুব অল্প পরিমাণ সেবন করলে অনেক নেশা হয়। তবে অনেক ব্যয়বহুল। তাই এটি বাংলাদেশে তেমন দেখা যায় না।

ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মাহবুবুল হক সজীবের তত্ত্বাবধানে, গুলশান জোনাল টিমের টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) দেবাশীষ কর্মকারের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয় বলেও জানান ডিবি প্রধান।