এম.আর মাহমুদ:
(মন্তব্য প্রতিবেদন)
কুকুর যখন মানুষকে কামড়ায় সেটি কিন্তু সংবাদ শিরোনাম হয় না। মানুষ যখন কুকুরকে কামড়ায় তখন সেটি সংবাদ শিরোনাম হয়। কুকুর কর্তৃক মানুষকে কামড়ানোর ঘটনা হর-হামেশা ঘটে থাকে। তবে মানুষ কর্তৃক কুকুরকে কামড়ানোর ঘটনা খুবই বিরল। আসলে উক্তিটির পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।

সমাজের রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে, তখন সৃষ্টি হয় নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি দেশে আলোচনার খোরাক চিত্রনায়িকা পরিমণি। পরিমণি গ্রেফতার হয়েছে। অনেকের মতে পরিমণি রাতের রাণী। তবে রাতের রাজারা এখনও অধরা। এরই মধ্যে তার সাথে শীর্ষ এক পুলিশ কর্মকর্তার অনৈতিক সম্পর্ক বা মধুর চন্দ্রিলার কিছু দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসলে সাকলায়েন নামক পুলিশের এই দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করেছে। তার এ ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা সত্যতা যাচাই করছে। এ নিয়ে বেশি মন্তব্য করা সমীচিন মনে করছি না।

অপরদিকে ফেনীর ডিবি পুলিশের একজন পরিদর্শক সাইফুলের নেতৃত্বে চকরিয়াস্থ একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ২০টি স্বর্ণের বার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বাধ্য হয়ে ২০টি স্বর্ণের বার হারানো গোপাল দাশ মামলা করেছে। পুলিম মামলাটি রেকর্ড করে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ জড়িত পুলিশদের গ্রেফতার করেছে। পুলিশ ডিবির পরিদর্শক সাইফুলের দখল থেকে ১৫টি স্বর্ণের বার জব্ধ করেছে। এক্ষেত্রে পুলিশ স্বগোত্রীয় পুলিশ সদস্যদের কোন ধরণের ছাড় দেয়নি।

এদিকে টিবিআই’র বাঘেরহাটের এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে একজন মহিলা পুলিশ পরিদর্শক ধর্ষণের অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি আদালতের নির্দেশক্রমে থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ওই পুলিশ সুপার এখনও গ্রেফতার হয়নি। তবে সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি নাকি ছুটিতে আছেন। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত এসপি সাহেবের প্রতি একটু উদারতা দেখিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত মামলাটি তদন্তাধীন। প্রথম আলোর মত একটি সংবাদপত্রে পুরুষ পুলিশের হাতে নারী পুলিশ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরণের নেতিবাচক সংবাদগুলো যখন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে হতাশ হই। কারণ পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এ বাহিনীর অনেক গৌরবময় অধ্যায় আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশের ভূমিকা জাতি কখনও ভুলবে না। করোনাকালে পুলিশের মানবিকতা জনগণ দেখেছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল যে হবে না তা বলা যায় না। কথায় ‘আছে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।’ দেশে প্রতিদিন কোন না কোন জায়গায় নারী নির্যাতনসহ খুন-খারাবীর মত ঘটনা ঘটছে। সে ক্ষেত্রে অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকাই একমাত্র ভরসা। এসব মামলা পুলিশই তদন্ত করে। আর সে পুলিশ যদি এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? কথায় আছে ‘বেড়ায় যদি ক্ষেত খায়, ক্ষেত বাঁচবে কেমনে?’ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রেকর্ড হওয়ার পরও পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন ছুটিতে গেছে। তিনি চাকুরীজীবি, ছুটিতে যাওয়া তার অধিকার। কিন্তু মামলার আসামী হওয়ার পর ছুটিতে যাওয়ার ঘটনায় নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ছুটিতে যাওয়ার পর তিনি যে পলাতক হবে না। এ নিশ্চয়তা কি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কি দিতে পারবেন? তবে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যার পর টেকনাফের পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ বাবুও ছুটিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সারাদেশে সিনহা হত্যা নিয়ে ঝড় শুরু হলে পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকে কক্সবাজার আদালতে হাজির করেছিল। বর্তমানে মামলাটি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অপরাধ করে পুলিশ যে একেবারে ছাড় পাচ্ছে এমন কথা বলব না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশও অপরাধ করে কারাগারে দিন কাটাচ্ছে। কথায় আছে আইন সবার জন্য সমান। তবে আমরা শংকিত। পুরুষ পুলিশ কর্তৃক নারী পুলিশ যৌন নির্যাতনের শিকার হলে পুলিশ বাহিনীর সুনাম ভুলুণ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে একটি কথা না বললে হয় না এ বাহিনীর সব পুলিশ যে খারাপ তা বলা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে মহানুভব পুলিশের মহানুভবতা মানুষ দেখেছে। সর্বমহলের তাদের কর্মকান্ডে প্রশংসিত হয়েছে। এক-কথায় বলতে হয় রাস্তার পাগলি যখন প্রশব বেদনায় কাতরায়, তখন পুলিশ এগিয়ে যায়। ডাস্টবিনে যখন বেওয়ারিশ শিশু কান্নায় আর্তনাদ করে, তখন পুলিশ ওই শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। সবকথার শেষ কথা হচ্ছে কয়েকজন অসতি নারী নদীতে গোসল করলে সব পানি যেমন অপবিত্র হয় না, তেমনি পুলিশের গুটি কয়েক সদস্যদের অপকর্মের দায় পুরো পুলিশ বাহিনীর উপর চাপিয়ে দেয়াও যায় না। তবে সময় থাকতে সাবধান না হলে, এ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়তে পারে।