বর্ষার ঝুম বৃষ্টিস্নাত দিবারাত। পৃথিবী তখন অদৃশ্য জীবাণুর শাসনাধীন। জাতিসত্তার বিদঘুটে আচরণ আর অস্বাভাবিক প্রকৃতির আলো বাতাসে চলছে জীবাণুদের রাজত্ব। ঊনিশ থেকে বিশ,আর বিষের সাথে একুশ নিয়ে বিষাক্ত একটি মহাকাল তখন।
মহামারীর সূচণালগ্ন থেকে এই জীবাণুযুদ্ধে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণীর ঘটেছে অপ্রত্যাশিত প্রয়াণ। সেই যুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধার চরিত্রে আমার অনিশ্চিত অংশগ্রহণ। সাংবাদিকতার চর্চা করতে গিয়ে সম্মুখযুদ্ধে গঠিত প্রতিদিনের জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যান করতে হয়েছে আমার। কেননা জাতি তখনো বড় অস্তির,অনিশ্চিত, অস্বাভাবিক। জনতার আয়নায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধের বর্ণনা করতে হতো আমার। আর জীবাণুদের হাত থেকে জনতাকে বাচাঁতে ময়দানে আমাদেরও লড়তে হয়েছে সেদিন। বারংবার ঝুকিপূর্ণতাকে তুচ্ছ করে মরণের প্রান্তরে ছুটতে হয়েছে। স্রষ্টার কৃপায় বহুবার মরতে মরতে বেঁচে যায়। মায়ের দোয়া আর জনতার প্রেম ছিল আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা। এই কঠিন যুদ্ধে লড়তে লড়তে একদিন জীবাণুদের কাঠগড়ায় সোপর্দ হই। সেদিন থেকেই টানা চৌদ্দ দিন করোনাগারে আমি আত্মবন্দী।
জীবাণুদের পরাজয়ের অপচেষ্টার দোষে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সেদিন। চৌদ্দটি দিনের প্রতিটা ক্ষণ ছিলাম জীবাণুদের শ্বাসরুদ্ধকর অত্যাচারে। শরীরের প্রতিটি শিরায় শিরায় ছিল জীবাণুদের দখল। আমার শ্বাসগ্রন্থে বারংবার কঠিন প্রহার করে তারা। জীবাণুর বিষদাঁত গুলো যেন আমার মাংসপিণ্ডকে শোষণ করছিল। চৌদ্দ দিনের মহাযুদ্ধে কেবল মৃত্যু ছাড়া কাউকে আলিঙ্গণ করার সুযোগ নেই। তদ্রুপ আমার ডানে-বামে ও অতীতে অসংখ্য স্বজনদের এভাবে চোখের সামনে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করতেও দেখেছি।
তবে অসামান্য এই জীবাণুর কাছে আমি হার মানিনি কখনো। কেননা আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম আমার তরূন সহযোদ্ধাদের কাছে “মুলাকাত হবে বিজয়ে মহামারী শেষে” এই প্রত্যয়ে।
দু সপ্তার জীবানুযুদ্ধের শেষ সপ্তায় অনেকটা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, “আবারো গাইবো জীবনের জয়োগান, মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে জনতাকে জাগাবো বেচে থাকার প্রেরণা।”
এই মহাকালের সাক্ষী হয়ে জীবাণুযুদ্ধের করোনাগারে নিজেকে আত্নবন্দীত্ব করে কঠিন অভিজ্ঞতা যোগিয়েছি জীবনে। হ্যা করোনাগারে আত্মবন্দী করেছি নিজেকে,তবে আত্নসমর্পণ করিনি কখনো…