আজিজুল আম্বিয়া:
মাস্টারদা দ্যা সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম বসু, তিতুমীর (প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী)শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোওরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রাহমান তেজস্বী কর্মে আজও ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে আছেন। যদিও জন্ম থেকে কেউই রাজনীতিবিদ কিংবা দেশপ্রেমিক ছিলেন না, কিন্তু কর্মগুণে আজও তারা দেশপ্রেম ও রাজনীতির রোল মডেল হয়ে আছেন এবং থাকবেন আজীবন। তাদের কাছ থেকে রাজনীতি আর দেশপ্রেমের দীক্ষা গ্রহণ করার আছে আমাদের। সৃজনশীল ও মননশীলতা না থাকলে যেমন ভালো লেখক হওয়া যায় না, তেমনি রাজনীতিবিদের জীবনেও শিক্ষা, দেশপ্রেম, সততা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে একজন ভালো রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না। আর এই বিষয়গুলির অনুপস্থিতির কারণে আজকে রাজনীতির মাঠে যে নেতাদের বিচরণ তারা বারবার ওয়ান ইলেভেন, আর ১৫ই আগস্টের মতো অশুভ দিন জাতিকে উপহার দিচ্ছেন। দেশপ্রেমের কারণে একজন বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদের ছেলে হয়েও শেখ কামাল গিয়েছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধে এবং এডিসি হয়েছিলেন জেনারেল আতাউল গনি উসমানী সাহেবের। এই বয়সে দেশের জন্য ত্যাগের কী কারণ ছিল?
শুধুই দেশপ্রেম। আর আজকে সম্রাট, পাপিয়া ও হেলেনা সহ অনেকর নাম আসে যারা রাজনীতির নামে আমাদের এক পাহাড় হতাশা উপহার দিয়েছেন কিন্তু শুভ লক্ষণ এই যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার বদৌলতে এই আলো আঁধারির খেলোয়াড়দের আমরা চিনতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশে যে দুর্নীতি, দেশবিরোধী চক্রান্ত চলমান এটি একদিনে শেষ হওয়ার নয়, কিন্তু বর্তমান সরকার এই বিষয়ে অভিযান শুরু করেছে তাই সাধুবাদ দিতে হয়। সত্যের কাছে মিথ্যা পরাজিত হয় তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু আজকে তাঁরই আদর্শের জয় জয়গান শুনি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে হারিয়ে এই জয় জয়গান শুনতে চাই না ।বাংলাদেশকে আর অভিবাবকহীন দেখতে চায় না এ জাতি। মীর জাফর কিন্তু ঘরের লোকই হয়। আপনি যাদেরকে নেতা বানানোর দায়িত্ব দিয়েছেন তারা কি শুনছেন আপনার সব কথা? তাহলে কেন পাপিয়া, সম্রাট, হেলেনা জাহাঙ্গীর মতো মানুষকে আমরা আপনার দলে নেতার পরিচয়ে দেখতে পাই? আজকে আপনার আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রিয় মুখ খুঁজতে কেন মাঝে মাঝে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়?
কেন তাদের সময় হয় না সাধারণ নেতা-কর্মীর কথা শোনার? কথা শুনলেও কেন গ্রুপিং লবিংকে গুরুত্ব দিয়ে অনেক ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়? আর পদবাণিজ্য তো একটা বহু পুরনো অভিযোগ আড়ালে রয়েই যায়। বর্তমানে আরেকটি বড় রোগ হয়েছে অনেক নেতাদের। এ রোগের নাম নিতেও লজ্জা হয়, এই রোগের নাম হল চামচামি। আর এই রোগে অনেক নেতাও আসক্ত । যে কর্মীরা চামচামি করে উনারা মনে করেন সেই আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে, দলকে এখানে মুখ্য মনে করেন না। তাই দলের ভালো পদপদবী সহজে চামচারা নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। আর এই ভুল সিদ্ধান্তে চলে আসে দলের উপর এক অনৈতিক নেতৃত্ব। মেনে না নিয়ে উপায় নেই তাই যোগ্যরা মূল্যায়নের অভাবে একসময় হারিয়ে যায়। আর একদিন এরাই মোস্তাক হয়, হয় অহংকারী কারণ যোগ্যতার চেয়ে তাদের প্রাপ্তি বেশি। তাই দলের স্বার্থে এই সব আবর্জনাসম নেতাদের প্রত্যাহার করে দেশপ্রেমিক এবং দলপ্রেমিক নেতাদের পুনর্বাসন করলে এর সুরাহা হতে পারে।
একজন রাজনীতিবিদকে অবশ্যই বুঝতে হবে একটি জাতির অধিকার, সংস্কৃতি, ধর্ম ও কৃষ্টি ও কালচার। আর এসবের কোথাও সমস্যা থাকলে সমাধান করার মতো সৎ সাহস থাকতে হবে, করতে হবে সমাধান। আর এসবের সমাধান করতে পেরেছিলেন বলে, শেখ মুজিবুর রাহমান হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মরে গিয়েও অমর। তাই একজন নেতা মানে এই নয় যে তাঁকে একটা দেশ কাধে নিয়ে বেড়াতে হবে? না, যে দেশটি তিনি পেয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে, নিজস্ব ক্ষমতার বলে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে এবং অবশ্যই তাঁকে এই দেশের জনগণের জন্য জনকল্যাণমূলক কাজ করে যেতে হবে ব্যক্তি উদ্যোগে। আমরা ভাগ্যবান যে আজকে তিতুমীরের মতো দেশপ্রেম, বাঁশের কেল্লা নিয়ে একটি বিরাট শক্তির মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। আজকে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি তাই সহজেই আমরা আক্রমণের প্রতিবাদ করতে পারি। এখন শুধু দরকার প্রকৃত দেশপ্রেমের। কিন্তু এটির অভাবেও এতদিন অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম, কিন্তু আজ দিন বদলে গেছে। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এসেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ, দেশীয় উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা মহামারিও মোকাবিলা করতে পারি নিজস্ব অর্থায়নে। বিশ্ব ব্যাংককেও আমরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণ করতে পেরেছি স্বপ্নের যমুনা সেতু। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পিছিয়ে থাকব কেন? বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়ে দিলাম আকাশ সীমানায় আমরা ও আছি সহাবস্থানে। তাই এখন ক্ষুদিরাম বসুর মতো দেশকে ভালোবেসে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া যুবকের বিশেষ প্রয়োজন বারবার। আর এই দেশপ্রেম হবে আমাদের প্রেরণার উৎস।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আগস্ট বারবার আসবে তাই নীতিহীন নেতাদের খুঁজে বের করতেই হবে? দখলদার অনেক নেতা এখনো বহাল, দল থেকে রাজনীতির নানান সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। তাই রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা আর থানা পর্যায়ে এদের চিহ্নিত করুন নিজস্ব এবং বিশ্বস্ত একটা বাহিনীর মাধ্যমে। এ ছাড়া দলের বৈদেশিক যত শাখা রয়েছে সেখানেও অনেক আগাছা নেতা সেজে আছেন। তাদের অহংকার আর স্বাস্থ্যর এতটা উন্নতি হয়েছে যে, তাদের পিছনে যে শিক্ষিত ও যোগ্য লোক রয়েছেন তা আপনি দেখবেন না।
যদি আপনি চার চক্ষু দিয়ে না দেখেন। ওনারা এখন খ্যাতির খাদক বনে গেছেন।
তাই অন্যের অর্জনকে নিজেদের বলে পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করেন না? কথিত আছে বঙ্গবন্ধুর সরলতার কাছে সেদিন জেনারেল ওসমানী সাহেব পরাস্ত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির ভূমিকার প্রশ্নে, তাইতো মুজিব বলে দিলেন
“বাঙালি আমার ভাই তারা আমাকে মারবে না।”
আপনি ও আপনার বাবার মতো সরলতা না দেখানো উত্তম বলে অনেকে মনে করেন। তাই সময় এসেছে এইসব মুখোশধারীদের বিরুদ্ধে একশন এ যাওয়ার। কারণ এখনো আল জাজিরার মতো মিডিয়াকে দেখি আপনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত।
কী তাদের স্বার্থ? বা কাদের হয়ে তারা লড়ছে? নতুবা আপনার সরকারের পজিটিভ খবর তারা করছেন না কেন? এই অবস্থার প্রতিরোধে কী ভূমিকা রাখছেন আপনার দলের নেতারা? যারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন লিখনীর মাধ্যমে তারা কলম সৈনিক কিন্তু কালেভদ্রে হয়তো তারা সম্মানীত হতে পারেন। আজকে ইলিয়াছ গংরা কি চায়?তারা আপনার সরকারের বিরুদ্ধে উঠে পরে লেগেছে। কিন্তু তারাতো বিরোধী দল নয়?
তবে কেন সরকারবিরোধী এই এজেন্ডা। কথিত নুর আজকে বিশ্বের মানুষের কাছে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় আসছে কিন্তু খোঁজ নিন তাদের উদ্দেশ্য কি?
শুধুই সমালোচনা? নাকি অন্য কিছু?বর্তমান অবস্থায় দেশবিরোধী যে কাজ চলছে এর মূল কারণ কি? কারণ একটাই প্রকৃত দেশপ্রেমের অভাব। নতুবা আমারা কেন দেশের পজিটিভ বিষয় নিয়ে আসতে পারি না? তাই এই সময়ের বাস্তবতায় দেশপ্রেমিক নেতা ও দেশপ্রেমিক জনতার বিকল্প নেই।
এই কারণে যখন বিশ্ব নেতারা ভাবতেছেন বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই আসুন বাংলার দেশপ্রেমিক জনতা আমরা হাতে হাত রেখে শপথ করে এগিয়ে যাই স্বপ্নের চেয়ে বড় একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে। এই বিষয়ে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের যারা দেশ গঠনে ত্রয়ী ভূমিকা রাখেন আর সাথে থাকতে হবে সকল রাজনীতিবিদদের উদার মন মানসিকতা। আমরা জানি সরকারের সমালোচনা ছাড়া দেশে গণতন্ত্র প্রাণ পায় না।তাই সবসময় গঠনমূলক সমালোচনা আশা করে এ দেশের দেশপ্রেমিক জনতা।

আজিজুল আম্বিয়া
লেখক ও কলামিস্ট।