সোয়েব সাঈদ, রামু :
কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালায় দরিদ্র কৃষকের ৫ হাজার লেবু গাছ কেটে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব গাছে পুরোদমে ফলনও এসেছিলো। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অভিযোগ- রেঞ্জ কর্মকর্তার দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে এসব গাছ কেটে দেয়া হয়েছে। এতে ওই কৃষকের ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নজির আলম জানিয়েছেন- জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের আওতাধিন বনাঞ্চলে সোনাইছড়ি খালের তীরে ৫ একর জমিতে ২০ বছর ধরে তিনি চাষাবাদ করে আসছেন। ওই এলাকায় একসময় তিনি তরমজু, মরিচ সহ বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে অপহরণকারি ও ডাকাতদলের উৎপাত বাড়লে তিনি ৮ বছর পূর্বে সেখানে লেবু চাষ শুরু করেন।
বর্তমানে সবকটি গাছে লেবুর ফলন আসতে শুরু করেছে। প্রতিটি গাছে ১০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত লেবু ধরেছে। তার এ সফলতা দেখে বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-হেডম্যান তার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করতে থাকে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত বৃহষ্পতিবার (২৯ জুলাই) সকালে জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু সহ একদল ভাড়াটে লোকজন তার লেবু বাগানে গিয়ে ফলবান এসব গাছ কাটা শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা পুরো বাগানের ৫ হাজার লেবু গাছ কেটে দেয়।
নজির আলম আরো জানান- জীবনের সব সঞ্চয় ও ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে তিনি তিলে তিলে এ বাগান সৃজন করেছেন। এখন সবকটি গাছ কেটে দেয়ায় তিনি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
নজির আলমের ছেলে আরিফ জানান- এক সপ্তাহ পূর্বে রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে লেবু বাগান রক্ষা করতে হলে ৩ লাখ টাকা দিতে বলেন। টাকা না দিলে পুরো বাগান কেটে দেয়ার হুমকী দেয়া হয়। পরে তার বাবা দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে না পারায় রেঞ্জ কর্মকর্তা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে বাগানের সবকটি লেবু গাছ কেটে দিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান-ওই জমিটি খালের তীরে হওয়ায় এলাকার অন্যান্যদের মতো নজির আলমও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। এমনকি সে প্রচুর ব্যাংক ঋন নিয়ে এ বাগান সৃজন করেছেন। কিন্তু বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার অমানবিক আচরণে নজির আলম এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসী এ নির্মমতার বিচার দাবি করেছেন।
এদিকে লেবু বাগান কেটে সাবাড় করার ঘটনায় অভিযুক্ত জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন-বন বিভাগের সংরক্ষিত বনে বাগানটি সৃজন করায় সেটি কেটে দেয়া হয়েছে। আরো যারা এভাবে বন দখল করে বাগান করেছেন তাদের বাগানও উচ্ছেদ করা হবে।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানিয়েছেন-নজির আলমের সৃজিত বাগানের বিপুল পরিমান লেবু গাছ কেটে দেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
সুশানের জন্য নাগরিক-সুজন রামু উপজেলা শাখার সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি আরো বলেন-ফলবান গাছ কাটার চেয়ে বর্বরতা আর হতে পারে না। এলাকায় এ নিয়ে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কারণ এধরনের ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৫ হাজার লেবু গাছ নিধনের বিষয়টি ছবি ও ভিডিওচিত্র সহ প্রকাশ হলে সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠে। ক্ষুব্দ জনতা অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
রামুতে চাঁদা না দেয়ায় ৫ হাজার লেবু গাছ কেটে দিলেন রেঞ্জ কর্মকর্তা
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
