মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
মানসিক ভারসাম্যহীন ও পাগল দেখলে ছুটে যান পুলিশ কর্মকর্তা টিপু রায়। তাদের পেট ভরে খাওয়ানোই এ কর্মকর্তার শান্তি। কুমিল্লা রিজিয়ন আওতাধীন মালুমঘাট হাইওয়ে থানার নবাগত সহকারী পরিদর্শক তিনি। পুলিশের ডিবিতেও ছিলেন টিপু রায়।
তিনি এখন চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাটে। দায়িত্ব একমাসপূর্ণ হয়নি। এই সময়ে কঠোর কর্তব্য পালনের পাশাপাশি মানবীয় কাজ দেখে স্থানীয়দের হৃদয় নাড়া দেয়। পুলিশের প্রতি আগেকার নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া ও ঈদগাঁও উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন সহকারী পরিদর্শক টিপু রায়। এদিন রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আমি বাড়ি ফেরার পথে দেখতে পাই, কানিয়ার ছড়ার ব্রিজে মানুষ চলাচল পথে ছিন্ন কাপড় মুড়িয়ে এক ব্যক্তি শোয়ে আছে। ষাটোর্ধ্ব মানুষটিকে দুর থেকে মনে হলো মানসিক ভারসাম্যহীন, রোগাক্রান্ত ও শরীরে বয়সের ছাপ। কাছে যাওয়ার ইচ্ছে হলেও মাথায় অন্যরকম মন্তব্য আসায় এত রাতে তা আর সম্ভব হয়নি।
পরদিন সকালে বৃদ্ধ লোকটির ছবি দেখতে পাই পুলিশ কর্মকর্তা টিপুর ফেসবুক আইডিতে। ছবিতে হোটেলে অসহায় বৃদ্ধ লোকটি অনেক খুশি মনে ভাত খাচ্ছেন। এরই সাথে সহকারী পরিদর্শক টিপু এফবি’র টাইমলাইনে লিখেন, শেষ রাতে মালুমঘাট বাজারের দক্ষিণে ব্রীজের উপর গাড়ির আলোতে দেখা যায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীন লোক বয়স অনুমান (৬৫) শুয়ে আছেন। গাড়ী দাঁড় করিয়ে কাছে গিয়ে চাচা বাড়ী কোথায় উত্তরে জানান ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা। আপনার নাম কি উত্তরে জব্বার মিয়া আর কিছু বলতে পারেন না। রাতে ভাত খেয়েছে কিনা প্রশ্নের উত্তরে- আল্লাহ কবে ভাত খাওয়াইছে জানিনা। ভাত খাবেন বলার সাথে সাথে খাবে বলে উঠে গেলেন। তাদের গাড়িতে করে লোকটিকে মালুমঘাট বাজারে হোটেলে নিয়ে যান। অবাক করা কান্ড, পুলিশ কর্মকর্তা টিপুর ফেসবুক টাইমলাইনে বিভিন্ন সময়ের এরকম আরো শ’খানেক ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে মালুমঘাট হাইওয়ে থানার সহকারী পরিদর্শক টিপু রায় জানান, জনগণের জানা-মালের নিরাপত্তা প্রদান দায়িত্ব পুলিশের। গুটিকয়েক অসাধুর কারণে পুরো ডিপার্টমেন্টের প্রতি নেগেটিভ ধারণা ছিল সাধারণ মানুষ। পুলিশের প্রতি এই মনোভাব পরিবর্তন ছিল আমার আরেকটি লক্ষ্য। তাই যোগদানের পর থেকে সৎ ও আদর্শের মধ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে আসছি। তাছাড়া আমার মানবিক এসব ছবি ফেসবুকে দেয়ার কারন হলো, এগুলো দেখে অন্যরাও আগ্রহী হবে এবং পুলিশের প্রতি মানুষের পুরনো সেই ধারণা পরিবর্তন হবে।
মালুমঘাট হাইওয়ে থানার পরিদর্শক মোঃ শাফায়াত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, টিপুর মানবিক কাজগুলো তাকে একদিন অনেক এগিয়ে নেবে। তাছাড়া এমন মনোভাবের করনে দিনদিন পুলিশ বাহিনীর প্রতি আস্থা বাড়ছে সাধারণ মানুষের।
অপরদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার’এর দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে মাত্র এক বছরেই পুলিশকে জনগণের বন্ধু প্রমাণ করতে অনেকাংশেই সফল হয়েছেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় আশা জাগিয়েছে জনগণকে। নিরন্তর প্রচেষ্টার ফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মানুষ।