জাহেদুল হক,আনোয়ারা (চট্টগ্রাম):
কিছুদিন আগেও গ্রামের মানুষের মুখে মুখে একটাই কথা ছিল যে,আমাদের গ্রামে করোনা নেই: আমাদের করোনাভাইরাস হবে না। এজন্য তারা মুখে মাস্ক পরা বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করতেন না!

কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে করোনার প্রকোপ এখন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। শুধু তা-ই নয়,সাম্প্রতিক সময়ে জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে আনোয়ারায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার বেশি।
এদিকে,উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সর্দি-কাশি ও জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একাধিক উপসর্গ থাকলেও করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কেউ। সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে অনেকেই চান না করোনা পরীক্ষা করতে। বেশির ভাগই স্থানীয় বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থও হয়ে উঠছেন। উপজেলার জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারেও উদাসীন হওয়ায় ধীরে ধীরে নাজুক হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি।
এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করা,বেশি করে টেস্টের আওতায় আনা,হাট-বাজারে নজরদারি জোরদার করা,নৌকা পারাপারের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা এবং সর্বোপরি সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়,এ উপজেলায় প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছেন করোনা রোগী। গত দুই দিনে ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা নিতে গিয়ে নমুনা দিলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ল্যাবে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসছে অনেকের। এ পর্যন্ত উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫৪ জনে। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৫৩০ জন নারী-পুরুষ। আর মারা গেছেন ১০ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজ নিজ গৃহে আইসোলেশনে আছেন ৪১৪ জন করোনা রোগী। করোনা রোগীদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ বেড না থাকলেও প্রস্তুত আছে ২০ শয্যার আইসোলেশন কেন্দ্র। বর্তমানে আইসোলেশন কেন্দ্রে ৪ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বলেন,উপজেলায় গত মাসের শেষ দিক থেকে চলতি মাসজুড়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলার জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপক অনীহা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পারিবারিক-সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়েও উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো,এসব কারণেই গ্রামের সংক্রমণ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন,করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আনোয়ারায় করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন সরকার ঘোষণা করেছে। আমরা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষের মধ্যে এক ধরনের অবহেলা কাজ করছে বলে আমি মনে করি। তারা যথেষ্ট পরিমাণে সচেতন নয়। লকডাউন বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এলাকাবাসী যদি সহযোগিতা করে এবং শেষ পর্যন্ত মাস্ক পরিধান করে তাহলে হয়তো আমরা করোনা সংক্রমণ কমাতে পারব।