বই পড়ানোর কারিগর

প্রকাশ: ২৬ জুলাই, ২০২১ ০১:২১ , আপডেট: ২৬ জুলাই, ২০২১ ০৮:৪৮

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


জন্মদিনে সামান্য স্মৃতি

-জাহেদ সরওয়ার

আজ প্রিয় মোটিভেটর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন। মোটিভেটর বললাম এ জন্য যে আজ অনেক মোটিভেটর আছে কিন্তু আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতো সূললিত মোটিভেটর আমি একজনও দেখিনি। বাংলাদেশে নীরবে বিশাল একটা পাঠক গোষ্ঠী তৈরি করেছেন উনি। তাকে বলা যেতে পারে বইপড়ানোর কারিগর। তার এই বইপড়ানোর যুদ্ধে আমিও শামিল হয়েছিলাম। আমার ঢাকাবাসের প্রথম দিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরিতে পড়তে যেতাম। যদিও ঢাকার সব লাইব্রেরিগুলোতে আমার অবাধ যাতায়াত ছিল তখন। গ্যাটে ইনস্টিটিউট( জর্মন কালচার সেন্টার) ব্রিটিশ কাউন্সিল। আমেরিকান সেন্টার। ইন্দিরাগান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্র। জাতীয় গণগ্রন্থাগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি। কিন্তু বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মতো এত বিচিত্র কালেকশন আর সহজ পদ্ধতি কারো ছিলনা। মাত্র দুশো টাকা দিয়ে একটা পাসপোর্ট ও স্ট্যাম্প সাইজের ছবি দিয়ে মেম্বার হওয়া যেত। বসেও বই পড়া যেত যতক্ষণ ইচ্ছা। ধীরে ধীরে কেন্দ্রের অন্যান্য কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত হই। আমার এক বন্ধু বলেছিল কেন্দ্রের একটা প্রোগ্রামে লোক নিচ্ছে তুই ট্রাই করতে পারিস। জাভিক বা জাতীয় ভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম। এর কাজ হচ্ছে উপজেলা জেলার স্কুলগুলোতে বইপড়ার জন্য মোটিভেশন করা ও পাঠচক্রগুলো নিয়মিত পরিচালনা ও পরিচর্যা করা। আমি তখন ঘুরার পাগল। প্রচুর ঘুরার স্কোপ থাকায় আমি আবেদন করি। আমাদের বলা হলো রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা পড়তে কারণ সায়ীদ ভাই ওখান থেকে প্রশ্ন করবেন। শেষের কবিতা পড়লাম। আমি তখন ফরাসি,রুশ,ইংরেজি সাহিত্যের ব্যাপক পাঠক। এটা আমার জীবনের প্রথম চাকরি। ইন্টারভিউর দিন প্রচুর টেনশন। একেকজন যাচ্ছে বেরুচ্ছে। কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। আমার ডাক পড়লে আমি বদ্ধ ঘরটার দরজা ঠেলে ঢুকি। সায়ীদ ভাইয়ের তখন ব্যাপক নামডাক। আমি পুরাই নার্ভাস ছিলাম।
উনি প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, রবীন্দ্রনাথ পড়েছো?
আমি বললাম শেষের কবিতা? উনি বললেন সেটাতো ইন্টারভিউর জন্য, এমনি পড়েছো কিনা।
আমি তখন বললাম, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প,গান আর প্রবন্ধগুলো ভাল লাগে আমার। কবিতা ও উপন্যাস তেমন পছন্দ করিনা। তিনি অবাক হলেন, নড়েচড়ে বসলেন। বললেন শেষের কবিতা সম্পর্কে তোমার মতামত কি?
আমি একটু ঢোক গিললাম। গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। একটু পানি পেলে ভাল হতো। কিন্তু সায়ীদ ভাইয়ের সামনে বসে পানি চাওয়ার সাহস পেলাম না।
আমি বলা শুরু করলাম, আমি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলো পড়েছি বিশেষ করে শেষের কবিতাকে আমার উপন্যাসই মনে হয়না। তিনি মুখে মেঘ নামিয়ে আনলেন। কিন্তু তৎক্ষণাত নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, কেন তোমার এরকম মনে হলো?
তখন আমি নেহায়েত ইচড়ে পাকার মতো বলতে শুরু করলাম, শুধু রবীন্দ্রনাথ পড়েছে অন্যকোন উপন্যাস পড়ে নাই সেরকম পাঠকের কাছে হয়তো তিনি বড় উপন্যাসিক কিন্তু ইতোমধ্যে যথেষ্ট উপন্যাস পড়েছে সে রকম কারো কাছে তিনি উপন্যাসিকের মর্যাদা পাবেন কিনা সেটা চিন্তার বিষয় কেননা শেষের কবিতার চরিত্রগুলো শুধুই টকেটিভ। এরা শুধু কথার পিঠে কথাই বলে। একটা উপন্যাসে চরিত্রের যে ডিটেইলস তা এখানে অনুপস্থিত। যাইহোক তিনি পাশে থাকা কেরানি গোছের একজনকে বললেন, ওর বিতর্ক করার শক্তি ও সাহস দুটোই আছে ওর নামটা লিখে রাখো। এটা শুধু একটা কাহিনি বা স্মৃতির রুপরেখা বললাম। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কাজ করা কালীন এমন অনেক স্মৃতি তৈরি হয়েছিল। সায়ীদ ভাইকে নিয়ে এরপর জেলায় জেলায় ফেরিতে রেস্ট হাউজগুলোতে যেই স্মৃতি সে সব নিয়ে একটা বই হয়ে যাবে অনায়াসে। কেন্দ্রে সব মিলিয়ে বছর চারেক কাজ করেছি এতে অনেক তিক্ত স্মৃতিও আছে অনেক।
জন্মদিনে আরো বেশি ভাল থাকুন এ কামনা রইল।