ফেসবুক কর্ণার:
মোটরবাইক নিয়ে আর লিখবো না ভেবেছিলাম। তার কারণ হচ্ছে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকজন সম্ভাবনাময় প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে মোটরবাইকের বিষয়টি টেনে আনায় এবং এই সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করায় বেশ কয়েকজন ডাইহার্ড ফ্যান বাইকার যথেষ্ট মনোকষ্ট পেয়েছেন।
তারপরও বিবেকের তাড়নায় এই লেখা। ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্ট এবং পোস্ট মর্টেম এর দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ছোট ঘটনা আমাকে এটা লিখতে প্রলুব্ধ করেছে।
১.
বেশ ব্যস্ত একটা দিন শেষে অনেকটা মধ্যরাতে জরুরি বিভাগে এলো মোটরবাইক এক্সিডেন্ট কেস। দুইজনই ব্রট ডেড (মৃত অবস্থায় আনীত)। মৃত্যু ছাপিয়ে যেই জিনিসটা আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছে সেটা হচ্ছে তাদের বীভৎস বিকৃত দেহাবয়ব। কোনোভাবেই তাদের চেনা যাচ্ছিলো না।
২.
জরুরি একটা কাজে (ট্রেনিং) এ ঢাকা যাচ্ছিলাম। কক্সবাজার এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবার কিছুক্ষণ পর আমার ড্রাইভার এর ফোন। বেয়াড়া এক মোটর বাইক উগ্র গতিতে ক্রস করার সময় আমার গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে নিয়ে গেছে। দ্রুত চালিয়ে তাকে আটকানোর পর উল্টো বাজে আচরণ। তোর স্যারকে আমার নাম বলিস- জানালো সে (সঙ্গত কারণে নাম ঠিকানা উল্লেখ করলাম না)। ড্রাইভারকে বললাম তার সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে গ্যারেজে গিয়ে মেরামত করে নিতে।
৩.
জরুরি বিভাগ থেকে বের হচ্ছিলাম। উল্টো দিক থেকে প্রচণ্ড গতিতে একটা বাইক ঢুকে পড়লো। নো এন্ট্রি (বাহির) গেট দিয়ে প্রবেশ করায় থামাতে চেষ্টা করলাম। আমাকে চিনতে পেরে না থেমে আরও দ্রুত চালিয়ে এন্ট্রি গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো। যাবার সময় রোগী নিয়ে আসা একটা রিক্সাকে মেরে দিয়ে গেলো।
৪.
এই ঘটনা আমরা সবাই জানি। কোরবানি ঈদের রাতের সেই মর্মান্তিক ঘটনা। দুইজন সম্ভাবনাময় তরুণের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা। মেরিন ড্রাইভে গতির প্রতিযোগিতায় জিততে গিয়ে মৃত্যুর কাছে হেরে যাওয়া।

মোটরবাইক এমনিতেই একটা অনিরাপদ যান। কিশোর কিংবা উঠতি বয়সের তরুণদের কাছে এটা রীতিমতো বিপজ্জনক। এটা যে শুধুমাত্র তাদের শারীরিক বিপর্যয় ঘটায় তা নয়, বরঞ্চ তাদের মনোজগতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। গতির নেশা তৈরি করে এই মোটরবাইক অবচেতন কিশোর মনে এক ধরনের ভয়ংকর উগ্রতা চড়িয়ে দেয়। যেই উগ্রতা তাদের দূর্বিনীত, অনমনীয়, অসহিষ্ণু করে তোলে। এনে দেয় ভয়ানক ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক বিপর্যয়।
মোটরবাইক দূর্ঘটনা মোটেই দূর্ঘটনা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এটা আত্মহত্যা। তাই আপনার সন্তানকে মোটরবাইক কিনে দেবার আগে আরো একবার ভাবুন। কারণ এটা অনেকটা নিজ সন্তানকে সুইসাইড উইপন কিনে দেয়া- এটা একটা হত্যা।

Shaheen Abdur Rahman -এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে।