সিবিএন ডেস্ক: করোনাভাইরাসে জর্জর গোটা জাপান। নানা আশঙ্কা আর বিরোধিতাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে শুক্রবার টোকিওতে পর্দা উঠছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’- অলিম্পিক গেমস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে পর্দা ওঠার দুই দিন আগে বুধবার সফটবল দিয়ে শুরু হয়ে গেছে প্রতিযোগিতা। এই মহাক্রীড়াযজ্ঞের ৩২তম আসর হওয়ার কথা ছিল গত বছর। করোনার কারণে তা এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই প্রাণঘাতী ভাইরাসের থাবা এতটুকুও দুর্বল হয়নি, তারপরও হচ্ছেই অলিম্পিক।

এরই মধ্যে আক্রান্ত অ্যাথলেটদের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ১১ হাজারের বেশি অ্যাথলেটদের সমাবেশ ঘটছে যেখানে, এই সংখ্যাটা সেখানে নগণ্য। পুল, ট্র্যাক আর মাঠ মাতাতে তৈরি বিশ্বের সেরা অ্যাথলেটরা। ২৩ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ৫০টি ডিসিপ্লিনে ৩৩টি ক্রীড়ায় লড়াইটা হবে ৩৩৯টি পদকের জন্য। নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিযোগিতার ৪২টি স্থান ও স্টেডিয়াম।

পাঁচ বছর আগে রিও ডি জেনেইরো অলিম্পিকে অবকাঠামো ও স্টেডিয়াম নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। তবে মহামারি একপাশ সরিয়ে রাখলে বলা চলে, টোকিও একেবারে প্রস্তুত। তাদের স্টেডিয়াম, গেমস ভিলেজ ও অবকাঠামো দেখে অনেক অ্যাথলেট বিস্মিত।

দর্শক থাকছে কি?

না, করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে গেমস শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে দর্শক ছাড়াই অলিম্পিক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ টোকিওতে চলছে জরুরি অবস্থা। মার্চেই আয়োজকরা এক ঘোষণায় জানায়, জাপানে বিদেশি কোনও দর্শক থাকবে না। দেশের দর্শকদের নিয়েই অলিম্পিক আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তাও হচ্ছে না। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতা করতে হবে অ্যাথলেটদের।

অলিম্পিক কি আগে বাতিল কিংবা স্থগিত হয়েছিল?

অলিম্পিক আগে কখনও স্থগিত হয়নি। কিন্তু দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময় তা বাতিল হয়েছিল। ১৯১৬ সালের গেমস হওয়ার কথা ছিল বার্লিনে, কিন্তু শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইতালি ও ব্রিটেনে নির্ধারিত শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন গেমস বাতিল হয়।

মশাল দৌড় কি হয়েছে?

২৫ মার্চ ফুকুশিমায় শুরু হয়েছিল মশাল দৌড়। বাড়ির উঠোন থেকে দর্শকরা কেবল দেখতে পেয়েছিল সেই দৌড়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে উদযাপন ছিল নিষিদ্ধ। কিছু মশাল বাহক তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। তবে জরুরি অবস্থা জারির কারণে টোকিওতে হয়নি মশাল দৌড়।

পরের আসরগুলো হবে কোথায়?

২০২২ সালে শীতকালীন গেমস হবে বেইজিংয়ে। প্রথম শহর হিসেবে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন গেমসের আয়োজক হচ্ছে তারা, ২০০৮ সালে এখানে হয়েছিল গ্রীষ্মের আসর। পরের তিনটি গ্রীষ্মকালীন আসর হবে প্যারিস (২০২৪), লস অ্যাঞ্জেলস (২০২৮) ও ব্রিসবেনে (২০৩২)।

টোকিওতে কতবার হয়েছিল অলিম্পিক গেমস?

একবার, ১৯৬৪ সালে। অবশ্য জাপান ১৯৭২ ও ১৯৯৮ সালে শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছিল সাপ্পোরো ও নাগানোতে।

এই অলিম্পিকে কর্মকর্তাদের বিতর্কিত কান্ড

লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মন্তব্যের কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে আয়োজক কমিটির প্রেসিডেন্ট ইয়োশিরো মোরি পদত্যাগ করেন। এক বৈঠকে তিনি বলেন, মেয়েরা অনেক বেশি বকবক করে। অলিম্পিকের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিরোশি সাসাকি পদত্যাগ করেন পরের মাসে। জনপ্রিয় কমেডিয়ান ও ফ্যাশন ডিজাইনার নাওমি ওয়াতানাবেকে ‘অলিম্পিগ’ বলেছিলেন।

অলিম্পিক মাসকট ‘মিরাইতোয়া’

এবারের মাসকটের নাম মিরাইতোয়া। জাপানি শব্দ মিরাইতোয়া মিরাই ও তোয়া শব্দের সমন্বয়ে নামকরণ হয়েছে। মিরাই অর্থ ভবিষ্যৎ ও তোয়া মানে চিরস্থায়ী। পুরো শব্দের মানে চিরস্থায়ী ভবিষ্যৎ।

নতুন ক্রীড়া ও ইভেন্টগুলো কী?

বেসবল ও সফটবল ১৩ বছর পর ফিরেছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে কারাতে, সার্ফিং, স্পোর্ট ক্লাইম্বিং ও স্কেটবোর্ডিং।  নতুন ইভেন্টও যুক্ত হয়েছে- থ্রি অন থ্রি বাস্কেটবল ও দুই খেলোয়াড়ের ম্যাডিসন সাইক্লিং।

বাদ পড়েছে কোন ইভেন্ট?

গত বছর রেসলিংকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা এসেছিল। কিন্তু এক বছর পিছিয়ে দেওয়া আসরে ফের যুক্ত করা হয়েছে এই ক্রীড়া। তাতে করে আগের আসরের থেকে বাদ পড়েনি কোনও ক্রীড়া।

অ্যাথলেটরা কি অর্থ পাবেন?

বিজয়ীদের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কোনও প্রাইজমানি রাখেনি। তবে অনেক দেশের ফেডারেশন তাদের পদকজয়ীদের আর্থিক পুরস্কার দিয়ে থাকে।

অলিম্পিক রিংয়ের মানে কী?

নীল, হলুদ, কালো, সবুজ ও লাল রঙয়ের তিনটি রিং অলিম্পিকের প্রতীক, যার নকশা করেছেন এই প্রতিযোগিতার জনক পিয়েরে দে কুবের্তো। যে রঙগুলো বাছাই করা হয়েছে তা বিশ্বের প্রত্যেক দেশের পতাকার কোনও একটি রঙয়ের সঙ্গে মিল রয়েছে। একেকটি রঙ দুই মেরুর মহাদেশ ছাড়া পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।

অলিম্পিকের বিধিনিষেধ

প্রচলিত প্রথা ভেঙে এবারের অলিম্পিকে প্রথমবার বিজয়ী অ্যাথলেটকে কোনও কর্মকর্তা মেডেল পরিয়ে দেবেন না। অ্যাথলেটরা নিজেরাই নিজেদের মেডেল পরবেন। মাঠে উপস্থিত প্রত্যেককে মাস্ক পরে থাকতে হবে। কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন না কিংবা হাতও মেলাতে পারবেন না। এমনকি অ্যাথলেটদের কাছাকাছি আসা ঠেকাতে গেমস ভিলেজে বানানো হয়েছে অ্যান্টি সেক্স বেড। যেখানে দুজন অ্যাথলেট শুলেই ভেঙে যাবে খাট।

এবারের অলিম্পিকে বাংলাদেশ

দশমবার অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। গত শনিবার জাপানে পৌঁছেছেন তীরন্দাজ রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকী ও শ্যুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি। তাদের সঙ্গে আছেন আর্চারির টিম লিডার কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল, রোমান ও দিয়ার প্রশিক্ষক মার্টিন ফ্রেডেরিক ও শ্যুটিংয়ের প্রশিক্ষক গোলাম শফিউদ্দিন খান। ধাপে ধাপে টোকিও পৌঁছাবেন সুইমিংয়ের আরিফুল ইসলাম, জুনাইনা আহমেদ ও্ অ্যাথলেটিকসের আব্দুল্লাহ হেল কাফি। সব মিলিয়ে অলিম্পিকের ৩২তম আসরে অংশগ্রহণ করছে ৬ বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ।

২৩ জুলাই টোকিও অলিম্পিকের মঞ্চে প্রথম নামবেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। আব্দুল্লাহ হেল বাকি ২৫ জুলাই মেন’স ১০ মিটার এয়ার রাইফেল প্রতিযোগিতায় নামবেন।

১৯৮৪ সাল থেকে এই পর্যন্ত নয়টি অলিম্পিক গেমসে অংশ নিলেও এখনও একটি পদকও পায়নি বাংলাদেশ। দশম আসরে পদক ভাগ্য খুলে কি না দেখা যাক।