ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন

আজ ইদ। কুরবানির ইদ মানে হচ্ছে মাংস বিতরণ ও রান্না করা এবং পরিবেশন। গোমাংস আমাদের উপাদেয় খাদ্য এবং প্রোটিনের অন্যতম উৎস।
লাল মাংস অর্থাৎ গরু বা খাসির মাংস প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৬, বি২,বি৩, জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস জাতীয় খনিজ ও ভিটামিনের খুবই ভালো উৎস। তবে এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল এর পরিমান বেশি থাকায় অনেকেই একে স্বাস্থ্যের বিশাল শত্রু বানিয়ে ফেলেন।

আপনার খাদ্যাভাস যদি সঠিক হয় এবং মাংসের পরিমান ও রান্না ঠিক রেখে গ্রহন করেন তবে হৃদরোগ,ডায়াবেটিসেও লাল মাংস গ্রহন করা সম্ভব। একে তো আমরা কোনো খাবার পরিমান ঠিক রেখে গ্রহন করি না, তার উপর আমাদের রান্নার পদ্ধতিতে রয়েছে অনেক ত্রুটি। আসুন জেনে নেই শারীরিক জটিলতায় ও কিভাবে গরুর বা খাসির মাংস আপনি গ্রহন করতে পারবেন।
♥ ডিম, মুরগির বিকল্প হিসেবে খাসি বা গরুর মাংস খান।

♥ একসাথে অনেকগুলো প্রোটিন খাবেন না। কোরবানির সময় গরু, খাসির মাংস খাওয়া হবে এটাই স্বাভাবিক,তাই এসময় অন্য প্রোটিনের উৎস কমিয়ে দিন। বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্রোটিনের চাহিদা নির্ধারিত হয়।
♥ প্রোটিন গ্রহনের সর্বোচ্চ মাত্রাঃ
একজন সুস্থ ব্যাক্তির প্রতি কেজি আদর্শ ওজন অনুযায়ী ১.৫-২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহন করা যায়। যদি আপনার বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ গরুর মাংস খেতে একেবারেই না করে দেন সেক্ষেত্রে তার পরামর্শ গ্রহন করুন। তবে সেরকম কোনো সমস্যা না থাকলে সপ্তাহে ২দিন একবেলায় ২/৩ টুকরো বা ৮৫গ্রাম মাংস আপনি গ্রহন করতে পারবেন। অবশ্যই একটানা প্রতিদিন মাংস গ্রহন করা যাবে না।

♥ গরুর মাংস মানেই কোলেস্টেরল নয়
একটি ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে ১৮৫ মি.গ্রাম এবং ১০০গ্রাম চর্বিহীন গরুর মাংসের কোলেস্টেরল এর পরিমান ৯৯ মি.গ্রাম। একজন সুস্থ ব্যাক্তির প্রতিদিনের কোলেস্টেরলের চাহিদা ৩০০ মি.গ্রাম ও হৃদরোগীর ২০০মি.গ্রাম। সহজেই বোঝা যাচ্ছে গরুর মাংস মানেই কোলেস্টেরল নয়, আপনাকে কষ্ট করে প্লেটে তুলে নিতে হবে চর্বিহীন ও ঝোল ছাড়া সলিড ২/৩ টুকরো মাংস।
♥ বিশেষ ভোজনবিলাসিতা পরিহার করুনঃ

অনেকেই মাংসের সাথে পুরি, লুচি, পরোটা, গার্লিক নান, বাটার নান, পোলাও খেতে খুব ভালোবাসেন। অনেকের ইতিমধ্যে এগুলোর নাম শুনেই জিভে জল চলে আসার কথা তবে বাড়তি চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমান কমাতে লাল ভাত, লাল আটার রুটি, সর্বোচ্চ একটি নান, অল্প তেলে রান্না পোলাও দিয়ে আহার সম্পন্ন করুন।

♥ সর্বোচ্চ একটি আইটেম রাখুন
গরুর বা খাসির মাংসের ৩/৪ পদ না করে ১-২টি আইটেম রাখুন। মনে রাখবেন টেবিলে যতো বেশি খাবার থাকবে আপনার মনকে মানানো ততো বেশি কষ্টসাধ্য হবে।

বিভিন্ন শারীরিক অবস্থায় খাদ্যের চাহিদা বিভিন্ন হয়ে থাকে তাই আপনার শারিরীক অবস্থা অনুযায়ী আপনার পুষ্টিবিদকে বলুন আপনার ইদের মেন্যুটি সাজিয়ে দিতে।
আপনার ইদ নিরাপদ হোক।
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক আপনার কোরবানি।
নিকটস্থ পাড়াপ্রতিবেশি যারা মাসে একবারও মাংস খেতে পারেন না তাদেরকে বিলিয়ে দিন।
নিকটস্থ হাসপাতালে বা করোনা রোগীর স্বজন যারা এবারে কোরবানি দিতে পারেনি তাদের মাংস খেতে দিন।
লেখক ঃ নার্স ও পুষ্টিবীদ,কক্সবাজার