এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার রাক্ষুসী মাতামুহুরী নদীর ভয়াল ভাঙন রোধে এবার কোনাখালী ইউনিয়নের তিনটি অংশে ডাম্পিং করা হচ্ছে ৩২ হাজার বস্তা জিওব্যাগ। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছর সাতটি প্যাকেজে ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫১০ মিটার এলাকায় ডাম্পিং করছেন ৩২০৩৯টি বালুভর্তি জিও ব্যাগ। ইতোমধ্যে তিনটি পয়েন্টে বেশিরভাগ জিওব্যাগ ডাম্পিং কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এই অবস্থায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১৫ জুলাই নদীর কাইজ্জারদিয়া ভাঙনস্থলের নির্মাণকাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম।

কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরী নদীর ভাঙন তাণ্ডবে কোনাখালী ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কোনাখালীর হাজারো বসতবাড়ি, শত একর ফসলী জমি থাকে চরম ঝুঁিকতে। এরই ধারাবাহিকতায় অরক্ষিত এসব এলাকাকে রক্ষায় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় জরুরীভিত্তিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তিনি বলেন, এবারের বর্ষা মৌসুম শুরু হলে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ে কাইজ্জারদিয়া পয়েন্টটি। এতে বাঘগুজারা-কোনাখালী ভায়া বদরখালী সড়কের প্রায় ১৫০ মিটার পর্যন্ত তীরসহ সড়কের অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে এমপি জাফর আলমের ডিও লেটারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই পয়েন্টসহ তিন পয়েন্টে জরুরীভিত্তিতে কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া উপজেলার বদরখালী শাখা কর্মকর্তা (এসও) জামাল মোর্শেদ বলেন, মাতামুহুরী নদী ভাঙনের কবল থেকে বাঘগুজারা-কোনাখালী ভায়া বদরখালী সড়ক এবং ইউনিয়নের কাইজ্জারদিয়া পয়েন্টে ১৫০ মিটার, কন্যারকুম পয়েন্টে ২০০ মিটার ও মরংঘোনা পয়েন্টে ১৬০ মিটার এলাকায় মোট সাতটি প্যাকেজে ৩২০৩৯টি বালুভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপন কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনটি পয়েন্টে জরুরীভিত্তিতে ৫১০ মিটার তীর সংরক্ষন এই কাজের বিপরীতে মোট বরাদ্দ ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, আপাদত অর্থবরাদ্দ না থাকলেও মাতামুহুরী নদীর চকরিয়ার কোনাখালীতে তিনটি অংশের ভাঙ্গনরোধে জরুরীভিত্তিতে ৫১০ মিটার এলাকায় তীরসংরক্ষন কাজ করা হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাকিম এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স মোক্তার আহমদ, মেসার্স এন এস নিশা ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আয়েশা কনষ্ট্রাকশন ইতোমধ্যে সাতটি প্যাকেজে সিডিউল অনুপাতে নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে।

তিনি বলেন, কাজে যাতে কোনধরণের অনিয়মের ঘটনা না ঘটে সেইজন্য পাউবোর ট্রান্সর্ফোস টিম অনুকুলস্থানে উপস্থিত থেকে জিওব্যাগ পরিমাপ পরবর্তী তা নদীতে ডাম্পিং করছেন। এখানে সিডিউল অনুযায়ী তিনটি পয়েন্টে মোট ৩২০৩৯টি বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। আশাকরি কাজ সমাপ্তি ঘটলে চলতি বর্ষা মৌসুমে কোনাখালী ইউনিয়নের অরক্ষিত এসব এলাকা তীব্র ভাঙন থেকে নদীর তীর, সড়ক এবং লোকালয় রক্ষা পাবে।

এদিকে ভাঙনস্থলের নির্মাণকাজ পরিদর্শনের সময় সাংসদ জাফর আলম স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বাস দেন, পাউবোর বাস্তবায়নদীন এই কাজের পাশাপাশি আগামীতে আরো প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ দিয়ে তীরসংরক্ষন কাজটি আরো টেকসই করা হবে। যাতে আগামীতে বড় ধরণের বন্যা হলেও কোনাখালী ইউনিয়ন এবং বাঘগুজারা-কোনাখালী ভায়া বদরখালী সড়কটি রক্ষা করা যায় এবং জনসাধারণ দুর্ভোগমুক্ত থাকে। পরিদর্শনের সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।