জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আসা ও ভর্তি হওয়া ১২ শিশুর নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার (১৮ জুলাই) বিষয়টি জানিয়েছে একটি গবেষক দল। গবেষণা দলের নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আব্দুর রব মাসুম এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক ও অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস ও ডা. নাহিদ সুলতানা।

গবেষণার সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান। গবেষক দলে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মিনহাজুল হক, ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস ও ডা. মো. একরাম হোসেন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফাহিম হাসান রেজা ও ডা. আজমাইন মাহতাব।

জিনোম সিকোয়েন্সিং এর তত্ত্বাবধানে ছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)- এর ভাইরোলজি বিভাগের গবেষকদল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।

এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় নবজাতক থেকে ১৬ বছর বয়সী করোনা আক্রান্ত শিশুদের। গবেষণায় প্রাপ্ত সিকোয়েন্স–ডাটা জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্যভান্ডার সংস্থা ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা’-তে গৃহীত হয়েছে। শনিবার (১৭ জুন) সকালে সংস্থাটি সিকোয়েন্সগুলো তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগেরই বয়স ১০ বছরের নিচে। সর্বনিম্ন আট মাস বয়সের শিশুর মাঝে ডেল্টা ধরন চিহ্নিত হয়েছে। এ গবেষক দলের অন্য গবেষণা অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের মাঝে ৮০ ভাগ রোগী পুরুষ হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মেয়ে শিশুরাও সমানভাবে এ ধরনে সংক্রমিত ও আক্রান্ত হচ্ছে। ৫০ ভাগ ছেলে এবং ৫০ ভাগ মেয়ের মধ্যে এ ধরনের উপস্থিতি দেখা গেছে। ৯৫ ভাগ শিশুর মধ্যেই জ্বরের লক্ষণ এবং ৭০ ভাগ শিশুর মধ্যে সর্দি ও কাশি ছিল। একটি শিশু পুরোপুরি উপসর্গহীন ছিল।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, গত চার মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে আলফা ও বিটা ধরনের প্রকোপ ছিল মে মাস পর্যন্ত। কিন্তু জুন থেকে ৯০ ভাগ রোগীর মধ্যেই ডেল্টা ধরন দেখা যাচ্ছে। এ পরিবর্তনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে, শিশুদের মধ্যে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়া।

এ প্রসঙ্গে গবেষকদলের অন্যতম সদস্য ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস বলেন, গত এক বছরে আমরা তেমন উল্লেখযোগ্য হারে শিশুদের মাঝে করোনাভাইরাস দেখতে পাইনি। কিন্তু গত জুন মাস থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে গেছে। ডেল্টা ধরনের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে আমাদের গবেষণা থেকে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছোট শিশুরা নিজের অনুভূতি কিংবা দুর্বলতা প্রকাশ করতে না পারায়, অনেকেই করোনা টেস্ট বা শনাক্তকরণের আওতায় আসবে না, যা চিন্তার বিষয়ও বটে।

আরেকজন গবেষক জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, শিশুদের মাঝে করোনা আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এ ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের প্রয়োজন বেড়ে যেতে পারে সামনের দিনগুলোতে। পরিবারের সবাইকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে শিশুদের স্বার্থে।

গত এপ্রিল মাস থেকে চট্টগ্রামের এ গবেষকদল চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জিনোমিক সার্ভিলেন্স বা নিয়মিত জিনোমিক বৈশিষ্ট্য ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের কাজ করছেন। গবেষণায় সার্বিক সহযোগিতায় আছে ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ, চট্টগ্রাম।