এমআর মাহামুদ:
সত্য লিখা যাবেনা, বলাও যাবেনা, লিখতে গেলেই বিপদ। নিরবে হজম করাই উত্তম। কারণ, বোবার কোন শত্রু নেই। ঠাকুরগাঁওয়ের একজন সংবাদকর্মী তানভীর হাছান তানু সত্য লিখতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আসামী হয়ে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করায় কারাগারের মেহমান হিসেবে থাকতে হয়নি। অপরদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বের করতে গিয়ে প্রথম আলোর জ্যৈষ্ঠ মহিলা সাংবাদিক শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত হয়েছে। পরে মামলার আসামী হিসেবে কারাগারেও থাকতে হয়েছে। সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় শুরু হলে ওই সাংবাদিক কোনরকমে জামিনে মুক্ত হয়েছে। এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। রাজধানীতে সাংবাদিকেরা আক্রান্ত হলে বা গ্রেফ্তার হলে সাংবাদিক সংগঠনগুলো সোচ্ছার হয়ে ওঠে। তখন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। অপরদিকে মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করে তারা অনেকটা ভারতের হরিজন সম্প্রদায়ের মত অসহায়। আক্রান্ত বা গ্রেফ্তার হলেও তেমন বাদ-প্রতিবাদ হয়না। হলেও যা কর্তৃপক্ষ আমলে নেয় বলে মনে হয়না। আমার প্রিয় অনুজ কালের কন্ঠ ও আজাদীর প্রতিনিধি ছোটন কান্তি নাথ সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে বেশ কিছু সংবাদ পরিবেশন করেছে। যার কারণের তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি থেকে নারী নির্যাতনসহ অনেক মামলা হয়েছে আদালতে। তবে বিজ্ঞ আদালত এসব মামলা সরাসরি আমলে না নিয়ে যথাযথ তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। ফলে পিবিআইসহ বেশ কটি সংস্থা তার মামলাগুলো তদন্ত করে সত্যতা না পেয়ে মিথ্যে হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ায় রক্ষা পেয়েছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বড়ই হুমকি স্বরূপ। আসল কথা হচ্ছে- সরকার গ্রাম-গঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন মূলক কাজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অর্থপুর্ণ উদারতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছে। যা দেখে যে কোন বিবেকবান মানুষের বিবেকে প্রশ্ন দেখা দেবে, এ অবস্থা সাংবাদিকদের নজরে আনলে কোন সাংবাদিক জনস্বার্থে সংবাদটি প্রকাশ করতে গেলে শুরু হয় নানা বিপত্তি ও হুমকি-ধমকি। এক সময় মফস্বলে সংবাদ কর্মীরা ছিল নির্বিক ও বেশিরভাগ সাংবাদকর্মী ছিল সুশিক্ষিত। এখন কিন্তু ভেজালের ঠেলায় সৎ ও সাহসি সাংবাদিকেরা অনেকটা কোনঠাসা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের বক্তব্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সৃষ্টি হয় একটি দালাল শ্রেণী। তারা অনেক ক্ষেত্রে দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের পদলেখন করে নিজের আখের গুজিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়ে থাকে। সমস্যা হচ্ছে এক জায়গায় আমাদের দেশের কিছু কিছু সংবাদপত্রের মালিক (বিশেষ করে আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো) প্রতিনিধি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিনিধির যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্য যাছাই করেনা। অনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করে বেশুমার প্রতিনিধি নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। যে কারণে মফস্বলের সাংবাদিকতায় চলছে চরম আকাল। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এক সময় সাংবাদিকতা কোথায় গিয়ে দাড়াবে তা মন্তব্য করা যাবেনা। বিশিষ্ট ছড়াকার আবু সালেহের একটি আলোচিত ছড়াটি পুণঃ মুদ্রন করা হল সচেতন পাঠকদের স্বার্থে

“ধরা যাবোনা, ছোঁয়া যাবেনা, বলা যাবেনা কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম……… এমন স্বাধীনতা; যার পিছনে জানটা দিলাম, যার পিছনে রক্ত; সেই রক্তের বদলা দেখো বাঁচাই কেমন শক্ত; ধরা যাবেনা, ছোঁয়া যাবেনা, বলা যাবেনা কথা; রক্ত দিয়ে পেলাম………. মরার স্বাধীনতা; বাঁচতে চেয়ে খুন হয়েছি বুলেট শুধু খেলাম, উঠতে এবং বসতে ঠুঁকি দাদার পায়ে সালাম; ধরা যাবেনা, ছোঁয়া যাবেনা, বলা যাবেনা কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম…….. আজব স্বাধীনতা।