মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছরার কবিতা সরণীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হোপ আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালু হচ্ছে শুক্রবার ১৬ জুলাই। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোঃ মামুনুর রশীদ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে শুক্রবার সকাল ১১ টায় জেলা সদরের মানুষের অতি কাঙ্খিত এ ফিল্ড হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন। সংশ্লিষ্ট সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ও হোপ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত হবে এই হোপ আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি। সম্পূর্ন বিনামুল্যে কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত রোগীদের দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে এখানে। ওষুধ, খাদ্য সহ সকল চিকিৎসা সামগ্রী হাসপাতাল থেকে রোগীকে বিনামূল্যে সরবরাহ দেওয়া হবে বলে জানান-হোপ ফাউন্ডেশন ফর ওমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কে.এম জাহিদুজ্জামান। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আগ্রহে হোপ ফাউন্ডেশন এই আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। তিনি বলেন, করোনা অতিমারি’তে জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ এর এ মানবিক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এই সেন্টারটিতে নারী-পুরুষ রোগীর পৃথক জোন রয়েছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্বয়ংক্রিয় অক্সিজেন কনসেনট্রেইটর যন্ত্র রয়েছে এই আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটিতে। যার সার্বিক পরিচালনায় থাকবে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষতা সম্পন্ন ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৪ জন নার্স, ৪ জন প্যারামেডিক চিকিৎসক, ৫ জন সাপোর্ট স্টাফ, ৭ জন আয়া/ক্লিনার, ৩ জন সিকিউরিটি গার্ড, ২ জন ওয়াশার ম্যান, ওয়ার্ডবয় সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য জনবল।
কান্ট্রি ডিরেক্টর কে.এম জাহিদুজ্জামান জানান, কক্সবাজারে হোপ ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে আগে থেকে একটি হাসপাতাল চালু থাকায় প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসা সামগ্রী সহ সবকিছু প্রয়োজনমতো ঐ হাসপাতাল থেকে সাপোর্ট নেওয়া যাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে শয্যা সংখ্যাও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯ রোগী রেফার সাপেক্ষে হোপ আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটিতে রোগী ভর্তি করানো হবে। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সেন্টারটি চালু করা হচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে অথবা বিনা চিকিৎসায় কোন রোগী মৃত্যুর মুখে পতিত হবে না।
অতি জটিল রোগীকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের এইচডিইউ এবং আইসিইউ’তে রেফার করা হবে। হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কে.এম জাহিদুজ্জামান বলেন, এ হাসপাতালে অতিমারিতে তাঁরা সরকারের সাথে কাজ করতে পেরে অত্যন্ত খুশি। এজন্য তিনি জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সূত্রমতে, গত এক বছর আগে SARI আসোলেশন সেন্টারটি কোভিড-১৯ রোগীর সেবায় চালু করা হলেও সম্প্রতি সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সারাদেশের মতো কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রামণ আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রস্তাবে হোপ ফাউন্ডেশন সেন্টারটি আরো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে শুক্রবার থেকে চালু করছে।
হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট, কক্সবাজার জেলার সন্তান, তিন দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি ও বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বেশির ভাগ করোনা রোগী’কে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব। এই লক্ষে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হোপ আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি কক্সবাজার জেলা সদরে আবার চালু করতে যাচ্ছে। করোনাকালিন অতিমারিতে হোপ ফাউন্ডেশন কক্সবাজারবাসির সেবায় নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
গত ১৪ জুলাই জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সেন্টারটি সরজমিনে পরিদর্শন করেন এবং কার্যক্রমের অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ সিবিএন-কে বলেন-কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এই আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি চালু করা হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সহ সরকারের সংস্থা গুলো করোনাকালে জেলাবাসীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ফ্রেন্ডশীপ পদ্ধতিতে হাসপাতালটি পরিচালনা করা হবে। এজন্য তিনি করোনাকালীন কক্সবাজারের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামান বলেন-হোপ ফাউন্ডেশন মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই সেন্টারটি চালু করতে যাচ্ছে দেখে যাঁরা ইতিমধ্যে উৎসাহ দিচ্ছেন, তাদের সকলকে তিনি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। বিগত ২২ বছরের অধিক সময় যাবত কক্সবাজার জেলায় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে, বর্তমানেও করোনা অতিমারিতে মানবিক সেবার তাগিদে কক্সবাজারবাসির স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এই ধারা ভবিষ্যতেও হোপ ফাউন্ডেশন অব্যহত রাখবে বলে জানান-কে এম জাহিদুজ্জামান।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও জেলা করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য আবু তাহের চৌধুরী বলেন, সদরে করোনা সংক্রামণ বাড়ায় জেলা সদর হাসপাতালে বেড সংকট দেখা দিয়েছে। শুক্রবার চালু হতে যাওয়া হোপ ফাউন্ডেশনের আইসলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি এই সংকট কাটাতে সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এজন্য তিনি জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, হোপ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।