জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

সম্প্রতি চট্টগ্রামের সিআরবিতে বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াখ্যাত ফেসবুক জুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। অনেক পরিবেশবাদী সংস্থা এবং সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।

বেশ কয়েকদিন যাবত এ নিয়ে চট্টগ্রামে খুব লেখালেখি হচ্ছে। সিআরবিতে রেলের জায়গায় শতবর্ষী গাছ কেটে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে। হাজার হাজার ফেসবুক ইউজার তাঁদের পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষের মন্তব্য সিআরবিতে হাসপাতাল না করার পক্ষে।

এর মধ্যে ফেসবুক লাইভে এসে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাউজানের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী’র ৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন পুত্র ফারাজ কমির চৌধুরী। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। ভিডিও স্ট্যাট্যাসটিতে মাত্র কয়েক ঘন্টায় সাত শতাধিক কমেন্টস ও ষোল শতের উপরে শেয়ার ও বহু ভিউ হয়েছে।

লাইভে এমপি ফজলে করিম চৌধুরী যা বলেছেন তা পাঠকের প্রয়োজনে হুবহু তুলে ধরা হলো-

“সিআরবির হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত আমি বলব সব কিছু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি যে জিনিসটা বলব সেটা হলো, হসপিটাল আমাদের দরকার। চট্টগ্রামের মানুষের দাবি আমাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে হয়। এটা হতে পারে না। যেহেতু চট্টগ্রামের মানুষের জন্য আধুনিক একটি হাসপাতাল দরকার। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, গাছ কেটে হাসপাতাল বানাতে হবে। সেটা একটি দেখার বিষয়। আমার মনে হয় সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনার দরকার রয়েছে। সিআরবি অন্তত একটি সুন্দর জায়গা। এটাকে আমি সব সময় মিনি সিঙ্গাপুর বলে থাকি।’

‘আমার মনে হয় মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার একটি জায়গাও সিআরবি। আপনি দেখবেন ওখানে তাপমাত্রাও অনেক কম। বাইরে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও সিআরবিতে দুই/তিন ডিগ্রি সব সময় কম থাকে। আমি নিজে এটা নিয়ে চিন্তিত যেহেতু এটি রেল মন্ত্রণালয়ের। আমি অনেকদিন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। সেটা আমার মাথায় আছে। আমি মনেকরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিবেন। যেহেতু হাসপাতালও দরকার। রেলের আরও জায়গা আছে, সড়ক ও জনপদের আছে, খাস জমি আছে, নানান জায়গা আছে, হাসপাতাল তো হতেই পারে। আমার কথাটা হচ্ছে এই জায়গাটা প্রায় ৩৬০ কাটা তার মানে ৬ একর জায়গা। ৬ একর অনেক জায়গা। এর মধ্যে আরেকটা জিনিস আমি জানতে পারলাম। হাসপাতালটি বানাতে ১২ বছর সময় লাগবে মানে একযুগ ।’

‘একযুগ লাগতে লাগতে হয়তো আমিও তো বাঁচব না। মানুষকে এটার সুফল ইমিডিয়েটলি পেতে হবে। আজকাল মডেল টেকনোলজিতে দ্রুত কাজ করা যেতে পারে। আমাদের চিটাগংয়ের মধ্যে এভার কিয়ার যে হসপিটালটা হয়েছে। ওটাও তো দৃশ্যমান। ওখানেও মানুষ অনেক সেবা পাবে। আমরা চট্টগ্রামবাসী যারা আছি দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এটার জন্য উদগ্রীব। আমি মনেকরি এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিবেন। অপরদিকে, যেহেতু আমার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ে আমি এটা নিয়ে কথা বলব। কথা বলে অবশ্যই জনগণের দাবি, মানুষের দাবি জানাব। সকল মানুষের সেবা চাই। কিন্তু এই নিয়ে যেন কোনো রকম কনফিউশন তৈরি না হয়। এটাই আমার বক্তব্য ।’

‘কারণ এটার মধ্যে আমি হাসপাতালের পক্ষে বাট কোথায় হবে? যেভাবে হবে হোক কিন্তু কোনো গাছ কাটা যাবে না। আমি নিজে প্রচুর গাছ লাগাই এবং আমি যদি সারাজীবন হিসাব করি দশ লক্ষের উপরে গাছ লাগিয়েছি। সেটা মানুষ জানে। আমি গাছের পক্ষে। গাছ আমাদের বন্ধু। গাছ না থাকলে আমরা বাঁচবে না। সুতরাং এই জিনিস নিয়ে আমাদের চলতে হবে। একটি গাছ ও কাটুক সেটার পক্ষে আমি না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ বান্ধব, ওনি সেটা চিন্তা করবেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একেবারে শীর্ষস্থানে নিয়ে গেছেন। আমি মনে করি ওনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই ফাইনাল। আপনাদের কে ধন্যবাদ ।’

এর আগে বুধবার (১৪ জুলাই) নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা নগরের সিআরবিতে জায়গা পরিদর্শন করেছেন। ছিলেন নগর আ.লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন; দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাগণ।

তাঁরা প্রস্তাবিত হাসপাতাল এলাকা, সিআরবি শিরীষতলা, উন্মুক্ত এলাকা ও সাতরাস্তার মোড়ের শতবর্ষী গাছের জায়গা আর বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল এলাকা ঘুরে দেখেন।

এসময় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, জনগণের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকার পরিবেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় সবুজায়ন এবং বনায়ন বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বৃক্ষরাজি ধ্বংস হয়, পরিবেশ ধ্বংস হয়, এমন কিছু এ সরকার করবে না।