‘ছইয়ালা’!

প্রকাশ: ৫ জুলাই, ২০২১ ০৯:৩৭

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


আলমগীর মাহমুদ
তিব্বত স্নো, কক্সো সাবান, পাখি রোমাল — একসময় প্রেয়সীর পরাণের উপহার বনে মন পাওনের মোক্ষম মারানাস্ত্র হিসেবেই কাজ করতো । ফ্রান্সের ভুবনমোহিনী পারফিউমের কাছে এরা আজ অচিন, বিলুপ্ত । সুন্দরীদের প্রাণের কক্সো চা’র দোকানের বেসিনে বেসিনে তাও ক্ষয় কম বলে কদর, সমাদরে নয়!
মানুষের চাহিদার বদলটা এমনি । বদলে বদলেই আজ এই আমরা । কুয়া, পুকুর, খালের পাড়ে গর্ত করে নালের পানি, রিংওয়েল, এরপর টিউবওয়েলে পদার্পণ । আজ বোতলে মিনারেলের যুগে সেই আমরা!
এই পর্যন্ত আসতে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহে চাটগাঁইয়াদের আছে অতীত ! আছে রূপকথার মত অবিশ্বাস্য গল্প কাহিনী।
বিশুদ্ধ পানি হিসেবে বৃষ্টির পানির কদর ছিল বেশ।
বাড়ির উঠানে খোলা আকাশে বৃষ্টির দিনে বসানো হতো ‘ছইয়েলা’।
বাঁশের চার খূঁটিতে একদিকে উচু, নীচ অংশ ঢালু টেংরা বসিয়ে তার উপর সাদা ধবধবে প্লাষ্টিক, ঢালুর নিম্নাংশে বড় বাঁশের ফালি দিয়ে ঝর্ণার মত একসাইডে পানির প্রবাহ ফেলা হতো।
জলভরতে বসানো হতো মাইট্যা কলসী । কলসী ব্যালেন্স করতে খড়ের গোলদানী (যাহ চাটগাঁইয়া ভাষায় পইচ্যা)
জলধরার কাজে এই জলকলই তৎকালের মানুষের ‘ছইয়েলা’ । অনেক সময় কলার পাতায় ছইয়েলা বানিয়েও তারা বৃষ্টির পানি ধরতো।
প্লাষ্ঠিক আবিস্কারের পুর্বে এবং প্লাষ্ঠিক দুষ্প্রাপ্যতার জমানায় গ্রামের মানুষ একই নির্মানশৈলীতে প্লাষ্টিকের স্থলে বেড়া বসিয়ে নীচে বাঁশের ফালি দিয়ে অনুরূপ কায়দায় এই ছইয়েলা বানাতো ।
চাটগাঁইয়াদের এই ”ছইয়েলা” দরদে উচ্চারিত আরেক নাম “ছইয়া”। বদলের দখলে আমাদের সেই অতীত আজ নামশুদ্ধ বিলুপ্ত ।

আলমগীর মাহমুদ
বিভাগীয় প্রধান সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া কলেজ
alamgir83cox@gmail. gmail. com