ফেসবুক কর্ণার :

কক্সবাজার অঞ্চলে রাখাইনদের অবস্থা:

উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট থেকে উৎপত্তি এবং উৎপত্তিস্থল থেকে ঠেলে পাঠানো হল- কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে, সেখানে টিকে থাকা বড় দায় !  সুতরাং, রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা-কৃষ্টি, স্বকীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্যসমূহ যথাযথ সংরক্ষণ, উন্নয়ন-বিকাশ ও অক্ষুন্ন রাখতে আবার ফিরে যেতে চাই– ‘‘রামুতে স্থাপিত রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট-তে ’’ !

ক) কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইতিকথা

০১। কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত রাখাইনদের নিজস্ব ভাষা-কৃষ্টি, স্বকীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটউ প্রতিষ্ঠার করার রাখাইন আদিবাসীদের বহু দিনের প্রাণের দাবী ও স্বপ্ন ছিল । সেই লক্ষ্যে রাখাইন আদিবাসীদের বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে সদাশয় সরকারের বরাবরে একাধিকবার আবেদন-নিবেদন করার ফলে অবশেষে তৎকালীন সরকার তথা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক কক্সবাজার জেলার রাখাইনদের বহুদিনের কাঙ্খিত প্রানের দাবীটি গৃহীত হয় এবং সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার অনুযায়ী বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।

উক্ত নির্দেশ পত্রের প্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট , রাঙ্গামাটির কর্তৃক বিগত ১৯৮৫ ইং সনের একজন সহকারী পরিচালক-কে নিয়োগ প্রদান করা হয় । কক্সবাজারে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক জনাব সুগত চাকমার নেতৃত্বে সর্বপ্রথম কক্সবাজার শহরে টেকপাড়ার সড়কস্থ একটি আধা-পাকার টিনসেট ভাড়ার ঘরে ‘‘ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ” , আঞ্চলিক কার্যালয় এর নামে একটি শাখার কার্যালয় স্থাপন করলেন ।

পরবর্তীতে তিনি কক্সবাজারে স্থাপিত উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়-টি পরিচালনার জন্য সরকারের সৃষ্ট ও অনুমোদিত মোট ৭(সাত) জনবলের মধ্যে কেবলমাত্র ৪ (চার)টি পদে স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর থেকে নিয়োগ প্রদান করেছিলেন ।

নিয়োগকৃত পদগুলোর মধ্যে ছিল- ১। মিউজিক টিচার ২। এলডিএ কাম-টাইপিস্ট ৩। এম.এল.এস.এস ও ৪। নাইটগার্ড্ ।

কিন্তু অবশিষ্ট আরও ৩(তিন)টি শূন্য পদগুলো – যেমন- ১. কালচারাল অফিসার ২. মিউজিক টিচার ৩. সুইপার । উক্ত শূন্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ করার সম্ভব হয়নি।

সরকার তথা রাঙ্গামাটি কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত একটি অফিস আদেশমূলে সহকারী পরিচালক জনাব সুগত চাকমা-কে ১৯৯৩ইং সালের দিকে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটিস্থ প্রধান কার্যালয়ে বদলি করায় তিনি সেখানে ফিরে গেলেন এবং তাঁর স্থলে উক্ত প্রধান কার্যালয় থেকে নতুন একজন সহকারী পরিচালক জনাব জাফার আহমাদ হানাফী-কে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ে নিয়োগ দিয়ে কক্সবাজারে প্রেরণ করা হয়।

যাই হোক- উক্ত পরিচালকগণের নেতৃত্বে কিছু জনবল নিয়ে বিগত ১৯৮৫ইং থেকে ১৯৯৩ইং সাল পর্যন্ত উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় দিবস যথাযথ পালন এবং স্থানীয বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা অংশ গ্রহণ করতেন । এভাবে কক্সবাজারে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে উপজাতীয় নৃত্য-গীত পরিবেশন ও অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মহলের নিকট পরিচিতি লাভ ও বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি সফলতার সাথে বেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসরমান ছিল।

০২। পরবর্তীতে বিগত ১৯৯১-৯৬ইং সনের তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটিরস্থ প্রধান কার্যালয় ‘‘ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউ ”-কে পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ এর নিকট হস্তান্তর এবং উহার কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়টি উক্ত স্থানীয় সরকার পরিষদের অধিক্ষেত্রে বাহিরে হওয়ায় কক্সবাজারস্থ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়টিকে স্বতন্ত্র একটি “রাখাইন অথবা উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ” প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণ্য এবং স্বীকৃতি প্রদান করার অত্যন্ত যৌক্তিক ও সেটি ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ন্যায়সঙ্গত দাবী ছিল-স্থানীয় রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের । কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলেও সেভাবে হয়নি ।

০৩। সেইদিন কেন রাখাইন কিংবা উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট নামকরণ হয়নি এর মূল কারণটি ছিল যে, তৎকালীন বিএনপি সরকারের পূর্ব্-পরিকল্পনার ছক অনুযায়ী সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্যদের-কে কক্সবজারে ভ্রমনের জন্য ইতোপূর্বের থেকেই সরকারিভাবে নোটিশ দেওয়া ছিল বলে মনে হয় । তাই, মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম একটি স্থানীয় সফর সূচীর অনুযায়ী বিমান যোগে বিগত ২২/৪/১৯৯৩ইং তারিখ সকালের দিকে কক্সবাজারে পৌঁছেন এবং শহরের বিভিন্ন নির্ধারিত স্থানে পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কর্তৃক বিগত ২২-৪-১৯৯৩ইং তারিখ বিকাল ৫.০০টায় কক্সবাজার হিল-টপ সার্কিট হাউসে একটি আলোচনার সভা আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসমূহ থেকে আগত সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ, সরকারি কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ও মিডিয়ার ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।

উক্ত সভায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য শুরুতে বলেন যে, কক্সবাজার জেলার সাংস্কৃতিক লালন-পালন ও বিকাশের জন্য কক্সবাজার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে এবং উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি এখানে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠা করার উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন ।

স্থানীয় অধিবাসীদের স্বার্থে এই ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজে সহযোগিতা করার জন্য অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম সকলের প্রতি আহবান জানান । তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন এহডক কমিটি করার জন্য জেলা প্রশাসক-কে নির্দেশ দেন ।তিনি কক্সবাজার ইনস্টিটিউ ও পাবলিক লাইব্রেরী হলের উন্নয়নের জন্য তাঁর তহবিল থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান ঘোষণা করেন।

উপরোক্ত সভায় সাংসদ, রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতৃবর্গ বক্তব্য প্রদান করা হলেও কেবলমাত্র একজন মাননীয় সাংসদ(সংসদীয় কমিটির সদস্য)জনাব বীর বাহাদুর/উশৈসিং (যিনি বর্তমানে মাননীয় পার্বত্য চটগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী) মহোদয় কক্সবাজার জেলার রাখাইন-সহ অন্যান্য আদিবাসীদের পক্ষে পূর্ণ্ সমথর্ন্ করে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন। তাই, তাঁর সৎ সাহসিকতা ও নায্যাধিকার প্রতি ও সহমত পোষণ করায় কক্সবাজার জেলায় রাখাইন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী/ সম্প্রদায় তাঁকে ধনবাদ-সহ কৃতজ্ঞতার চিত্তে এখনও স্মরণ করে ।

কিন্তু দুঃর্ভাগ্যজনক যে, সেইদিন উক্ত সভায় রাখাইনদের পক্ষে প্রস্তাবিত দাবী ও মতামত-কে তৎকালীন বিএনপি সরকার ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কোন প্রকার আমলেই নেওয়া হয়নি এবং কক্সবাজারে স্থানীয় বিভিন্ন প্রগতিশীল ও অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক -সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর হিসেবে আমাদের সু-পরিচিত প্রিয় নেতৃবর্গের কাছ থেকেও উক্ত বিষয়ে সেইদিন আশানুরুপ কোন সহমর্মিতা, সমর্থন , সুপারিশ ও সমবেদনামূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়নি।

০৪। উপরোক্ত অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার ফলে- তৎকালীন বিএনপি সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/কর্তৃপক্ষ মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বিবেচনায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কক্সবাজার জেলার স্থানীয় রাখাইন আদিবাসীদের নায্যাধিকার ও দাবী-দাওয়া-কে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেছে। মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত একটি স্মারকপত্রের মূলে- তাদের সম্পূর্ণ্ ভোগ দখলের ব্যবহৃত ও ঐতিহ্যবাহী “ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ” এর নাম, মূল নীতি, আদর্শ ও উদেশ্যবলী-কে পাল্টে দিয়ে ‘‘ ‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ’ – নামকরণক্রমে এবং পূর্বে অনুমোদিত পদ ও ইনস্টিটিউটের কর্মরত জনবল লইয়া সরকার একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করিলেন।’’——এ মর্মে জারীকৃত একটি অফিস স্মারকপত্র মূলে কার্যকরী করা হয়। যা- উক্ত নামটি অদ্যাবধি বিদ্যামান ও বহাল রয়েছে ।

০৫। তৎকালীন বিএনপি সরকার তথা মন্ত্রনালয় কর্তৃক অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার ভূল সিদ্ধান্ত-কে কক্সবাজার জেলার রাখাইন ও অন্যান্য আদিবাসীরা মেনে নিতে পারেনি বিধায় তাদের প্রিয় সংগঠন ‘রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (RBWA)’ কর্তৃক তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।

সেসাথে তারা বাধ্য হয়ে আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যে, যেহেতু রাখাইন ও অন্যান্য আদিবাসীদের ন্যায্য দাবীর প্রতি যতদিন সরকার মেনে নিবে না-, ততোদিন পর্যন্ত কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় এবং এর উদ্যোগে আয়োজিত কোন আলোচনার সভায় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ থেকে সকল প্রকার RBWA-এর সদস্য এবং কক্সবাজার জেলার সকল রাখাইন ও অন্যান্য আদিবাসীগণ বিরত থাকবে ; এ মর্মে- সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা ও ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন ।

এর ফলে কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত রাখাইন ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনও অধিকাংশ রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ের নীতিবান ব্যক্তিগণ ও তাদের ছেলে-মেয়েরা কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় গৃহীত বিভিন্ন কর্ম্সুচী ও অনুষ্ঠানাদিতে আন্তরিকভাবে অংশ গ্রহণের দ্বিধাবোধ করছে। এমতাবস্থায় রাখাইনদের নায্য দাবীটি এখনও সুরাহা না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বছরের কোটি কোটি টাকা কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অনুকূলে বাজেট প্রদান করা হলেও বাস্তবে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন ও অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না ।যা- বর্তমান সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে।

০৬। বর্তমান আ’লীগ সরকারের আমলে বিগত ২০১০ইং সনের জাতীয় সংসদে দেশের ক্ষুদ্র জাতি সত্বার / অনগ্রসর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি-ঐতহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার আইন-২০১০ প্রণীত করে জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদন প্রদান করায় আমরা কক্সবাজার জেলার রাখাইন-সহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ের পক্ষে বর্তমান আ’লীগ সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত-কে অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই ।

০৭। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতা’র নিরীক্ষে দেখা যায় যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় জেলা ও উপজেলার প্রশাসন/বিভিন্ন অফিস / দপ্তর পর্যায়ে ও সাধারণ জনগণের মাঝে অনেকেই মনে করেন এবং নানান ভূল ভ্রান্তি ও বিতর্ক্ সৃষ্টি হয় যে, যেহেতু “কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র” নামক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটি দেশে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় প্রথম বর্ণিত শব্দসমূহে- ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ বিশেষ সম্প্রদায়ের নামবোধক শব্দগুলো লিখা নেই, শুধু জেলার নাম লেখা আছে ; সেহেতু ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য উক্ত আইনে বলা হলেও তা-বাস্তবে জনসাধারণের মধ্যে গ্রহণয়োগ্য হচ্ছে না । ঐটি বিশেষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত- একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বলা চলে না, বরং সেটি সমগ্র কক্সবাজার জেলাবাসীদের ব্যবহারের জন্য এবং সর্বসাধারণের সমাধিকার ও সার্ব্জনীন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাধারণ জনগণের ধারণা ও বিশ্বাস করে ।

সুতরাং, এটি সামান্য বা সাধারণ বিষয় মনে হলেও আসলে জেলার নামটি সন্নিবেশিত থাকায় ‍উক্ত শব্দের অর্থবোধক ব্যাখ্যাটি প্রণীত আইনের ২নং ধারায় (২)উপ-ধারার সাথে সাংঘর্ষিক ও পরিপন্থী বলে অভিযোগ রয়েছে । অতএব, সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখে তা- সংশোধন করার সমীচীন ও বাঞ্চনীয় ।

০৮। এমতাবস্থার প্রেক্ষিতে- ‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’-এর নামকরণ নিয়ে কক্সবাজারের সকল প্রশাসন /অফিস-দপ্তরগুলো ও সাধারণ জনগণের মাঝে ভূল-ভ্রান্তি ও বিতর্ক্ যাতে আর সৃষ্টি না হয় এবং উক্ত আইনের সাথে পরিপন্থী ও অসঙ্গতি শব্দাবলীর পরিবর্তন ও সংশোধন করার খুবই জরুরী এবং সেটি এখন সময়ের দাবী বলে মনে করছে-স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ আদিবাসীর নেতৃবৃন্দ ।

উল্লেখ্য যে, যেহেতু বিগত সরকার তথা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ মোতাবেক রাঙ্গামাটিরস্থ অধীণে কক্সবাজারে সর্বপ্রথম বিগত ১৯৮৫ইং সনের ‘‘উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট”, আঞ্চলিক শাখার কার্যালয় স্থাপন করা হয় এবং সেটি কার্যাক্রম বিগত ১৯৮৫-৯৩ইং সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল বিধায় সেই প্রচলিত ধারাবাহিকতা’র আলোকে আইনের বিদ্যমান “ কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ” এর নামটিকে সংশোধন / পরিবর্তন করার খুবই অপরিহার্য্ বটে ।

তা ছাড়া- বর্তমান আ’লীগ সরকারের নতুন প্রবর্তিত নাম- উপজাতি এর স্থলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম অভিহিত করা হয়েছে, সেহেতু অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট/একাডেমীর ন্যায় বর্তমান ‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’-টিকেও “ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ” কক্সবাজার–এর নামকরণের জন্য বর্তমান সরকার তথা মন্ত্রণালয়-সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার তাগিদ এবং এবিষয়ে কক্সবাজার জেলাপ্রশাসন এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে– বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কক্সবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ ।

০৮। এ প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বিগত ২০১০ইং সনের আ.লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত ও অনুমোদিত “ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ” এর ধারা নং ৪(ঘ) মূলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান মোট ৬টি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর সাথে “ কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ”- টিকেও যখন বর্তমান সরকার একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং বর্ণিত আইনের গেজেট কপি যখন প্রকাশিত হয়েছিল ; তৎসময়ে কক্সবাজারের স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনগুলোর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

উক্ত সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত ও দাবী-দাওয়া পেশ করা হয়েছিল যে, ‘‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’’ একটি সার্বজনীন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ; সুতরাং, সেটি-কে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না এবং উক্ত আইন থেকে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র- নামক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান-কে বাদ দিতে হবে।

উক্ত দাবীতে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিন্দা জ্ঞাপন এবং উক্ত সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে মামলা ও কঠোর কর্মসুচি-সহ আন্দোলনের যাওয়ার পর্যন্ত বক্তব্য/বিবৃতি প্রদান করেছিলেন- সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । । যা- কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত স্থানীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাগুলোতে সংবাদ ছাপা হয়েছে।

এতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, কক্সবাজারে স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনগুলোর মতামত ও প্রস্তাবনা আসলে কী ছিল এবং কেন ? বিষয়টি দেরীতে হলেও বর্তমান সরকার তথা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সেটি বিশ্লেষণ করে একটি গ্রহণয়োগ্য সমাধান করা যেতে পারে। কারণ- কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নিয়ে যাতে আবার কক্সবাজার জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয় । এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো বিষয়টি আমলে নেয়ার সমীচীন বলে মনে করছি ।

খ) কক্সবাজর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার হবার পর আবার রামুতে ‘ রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট ’ স্থাপনের জন্য রাখাইন সংগঠন কর্তৃক বর্তমান আ’লীগ সরকারের নিকট দাবী-দাওয়া পেশ করতে হলো কেন ? উক্ত প্রশ্নের জবাব/উত্তর পেতে চাইলে নিম্নে বর্ণিত অনুচ্ছেদগুলো পড়ার অনুরোধ রইলো ।

১। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গির বিবেচনায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য যখন ( বিগত ১৯৯৩-৯৪ইং সনের দিকে) কক্সবাজার টেকপাড়াস্থ একটি আধা-পাকার ভাড়ার ঘরে সর্বপ্রথম স্থাপিত ‘উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট- এর ঐতিহ্যবাহী নামটি-কে গভীর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মুছে দেওয়া হয় এবং স্থানীয রাখাইনদের পেশকৃত ন্যায়সঙ্গত দাবী-দাওয়া-কে সম্পূর্ণ্ উপেক্ষা করে ‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ নামকরণ করা হয়েছিল;

তখন কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত রাখাইন-সহ অন্যান্য আদিবাসীদের পক্ষে- বাংলাদেশে রাখাইনদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ (RBWA)- এর উদ্যোগে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন কর হয়। এর পাশা-পাশি কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্ম্সুচিগুলোর বর্জ্ন করা-সহ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের বরাবরে রাখাইনদের বহুদিনের আকাঙ্খিত স্বপ্ন ও প্রাণের দাবীটি পূরণ করার জন্য নতুন একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ‘রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট / একাডেমী ’ স্থাপনের জন্য সরকার তথা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট পুনরায় পেশ বা উথ্থাপন করতে বাধ্য হয় ।

০২। বিগত ১১সেপ্টেম্বর / ১৯৯৮ ইং তারিখে একটি সরকারি সফরে প্রস্তাবিত ‘‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কমপ্লেক্স’’ ভৌত নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হিসেবে যোগদানের উদ্দেশে তৎকালীন মাননীয় যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের (‍যিনি বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং মাননীয় সড়ক ও সেতু মন্ত্রী) মহেদায় কক্সবাজারে শুভাগমণ করেছিলেন ।

তিনি (মাননীয় মন্ত্রী) সকালের দিকে ‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন’ ফলকটি উদ্বোধন করার পর সেইদিন সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরস্থ স্থানীয় অগ্গামেধা বৌদ্ধ বিহারে রাখাইনদের আয়োজিত একটি সম্বর্ধনার সভায় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট তৎকালীন RBWA-এর নেতৃবৃন্দ কেন-? এবং কী কারণে- ? স্থানীয় রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/সম্প্রদায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যে কোন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকছে, সেখানে যেতে এত অনীহার কেন? এবং রাখাইনদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা ও সমস্যা-সম্ভাবনার সম্পর্কে তুলে ধরেছিলেন । দেশের অন্যান্য অঞ্চলে স্থাপিত- উপজাতীয সাংস্কৃতিকি ইনস্টিটিউট /একাডেমীগুলোর ন্যায় সম-মর্যাদায় কক্সবাজার অঞ্চলেও একটি স্বতন্ত্র ‘রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’ স্থাপনের জন্য জোরালো দাবী-দাওয়া পেশ করেছিলেন ।

০৩। তাদের পেশকৃত দাবী-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে- মাননীয় মন্ত্রী বলেন যে, যেহেতু আগের বিএনপি সরকারের আমলে কক্সবাজার শহরে একটি ‘কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কমপ্লেক্স’ স্থাপন করে গেছেন, সেহেতু এই শহরের মধ্যে আর একটি ‘সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’ করার যুক্তিসঙ্গত হবে না বিধায় কক্সবাজারের ২০/২৫ কিঃমিঃ দুরত্বে কিংবা শহরের আশে-পার্শ্বে রাখাইনদের পেশকৃত দাবীর অনুযায়ী আর একটি রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে- বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ।

তবে তিনি একটি শর্ত্ দিলেন যে. ‘রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’ স্থাপনের জন্য রাখাইনদের পক্ষ থেকে সরকারকে বিনামূল্যে একখন্ত জমি দান করতে হবে, সেই দানকৃত জমির ওপর সরকারের অর্থায়নে রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে- বলে ঘোষণা দিলেন ।

০৪। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের আরোপিত শর্তানুযায়ী RBWA-এর উদ্যোগে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং তাদের উদ্যোগের ফলে অবশেষে রামু সদরে রাখাইন বড় ক্যাং-এর ৫০ (পঞ্চাশ) শতক ধর্মীয় জায়গা/জমি সরকার তথা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে বিনা মূল্যে দান করা হয়।

পরবর্তীতে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনার আলোকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীণে “রামুতে রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক-১ম পর্যায় শীর্ষক ’’-এর নামে একটি উন্নয়ন কর্মসুচি গৃহীত হয় । উক্ত উন্নয়ন কমসূচির অনুকূলে বিগত ২০০৭-২০০৮ অর্থ্ বছরে সরকারের গৃহীত বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট থেকে মোট প্রায় এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ব্যয়ের ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীরসহ একটি দ্বিতল ভবন, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে ।

০৫। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীণে উক্ত কর্মসুচির অনুকূলে বরাদ্দকৃত বাজেটের আওতায় বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হলেও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় জনববল নিয়োগের জন্য পদগুলো সৃজন করা , প্রয়োজনীয় সঙ্গীত-নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্রপাতি, নৃত্য উপকরণ ও সাজ-সরজ্ঞামাদি, বিভিন্ন আসবাবপত্র ও অন্যান্য অনুসাঙ্গিক লাইট-সাউন্ড যন্ত্রপাতি এবং মনোহারী দ্রব্যাদি ক্রয় ও স্থাপন ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান আ.লীগ সরকারের আমলে প্রস্তাবিত রামুতে ‘‘রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক -২য় পর্যায ” উন্নয়ন কর্মসুচি-টি গৃহীত ও অনুমোদিত হয় ।

উক্ত ২য় পর্যায় উন্নয়ন কর্মসূচির অনুকূলে সরকার বিগত ২০১৫-১৭ অর্থ্ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট থেকে মোট প্রায় আরও এক কোটি ষাট লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছিল । অনুমোদিত পত্রের অনুযায়ী কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অনুকূলে অর্থ্ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ছাড়কৃত কিস্তির অর্থ্ উত্তোলনের জন্য মঞ্জুরী পত্র প্রেরণ করা হলেও রামুতে নির্মিত সাংস্কৃতিক ভবনে বিজিবি বাহিনী অস্থায়ী ক্যাম্প-টি বহাল থাকার অজুহাতে কোন প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ না করে- উক্ত -২য় পর্যায় উন্নয়ন কর্মর্সুচির অধীণে কোন কার্যক্রম শুরু না করে দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইলো না- কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এমতাবস্থায় , উক্ত উন্নয়ন কমসূচি-টি বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একজন উপর্যুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ পরিচালক খুবই না থাকায় সরকারের গৃহীত এবং ছাড়কৃত কিস্তিসমূহের সম্পূর্ণ অর্থ্ সরকারি কোষাগারে পুনরায় ফেরত গেছে এবং উক্ত ২য় পর্যায় উন্নয়ন কর্মসুচি-টি সরকারের অনুমোদিত উন্নয়ন বাজেট (২০১৭-২০১৮ অর্থ্ বছর) এবং মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ও নির্ধারিত উন্নয়ন কর্মসূচির তালিকা থেকে অবশেষে বাদ দিতে হয়েছে- বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায় । যা-খুবই দুঃখজনক ।

০৬। রামুর রাখাইন সম্প্রদায়ের বড় ক্যাং(বৌদ্ধ বিহার) কর্তৃক দানকৃত জমির দলিলে বর্ণিত শর্তাদির অনুযায়ী রামুতে স্থাপিত রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট-টিকে দেশের বিদ্যমান অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সমমর্যাদায় স্বতন্ত্র একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুপান্ত করে বিদ্যমান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ষ্ঠার আইন-২০১০ এর আওতায় ধারা নং- ৪ এর (জ) উপধারা’র মূলে একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী র সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীণে বিদ্যমান আইন, প্রবিধানমালা ও নিয়ম-বিধির মোতাবেক স্বীকৃতি প্রদানের কথা ছিল ।

সেইমতে সরকারের অনুমোদিত এবং বাস্তবায়িত রামুতে রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক-১ম পর্যায় উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত একটি দ্বিতল ভবন নির্মিত হলেও স্থানীয় রাখাইন ক্ষুদ্র জাতি সত্বার অনগ্রসর সম্প্রদায়ের লোকেরা এযাবত সেটি ব্যবহার করতে পারছে না । কারণ- সেখানে বিজিবি’র অস্থায়ী ক্যাম্প দীর্ঘ্ প্রায় ৮/ ৯ বছর যাবত ব্যবহার করছে।এমতাবস্থায়, স্থানীয় রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা সেখানে গিয়ে নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য লালন-পালন ও চর্চার-সহ ইত্যাদি কার্যক্রম করার মত কোন পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না এবং তারা এখনও সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত ।

০৭। এখানে মূল কারণটি হচ্ছে যে, কক্সবাজার জেলা ও উপজেলার প্রশাসন কর্তৃক গত ২৯শে সেপ্টেম্বর /২০১২ তারিখে রামুতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার কারণে- স্থানীয় রামুর এলাকায় জনগণের জরুরিভাবে আইন-শৃঙ্খলা নিরাপত্তার স্বার্থে রামুতে নির্মিত রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর ভবনে বিজিবি বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে সেখানে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল ।

কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, বর্ত্মানে রামুর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবস্থার ভাল ও শান্তি পরিবেশ উন্নীত হয়েছে এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে । তবুও রামুতে স্থাপিত রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ভবনে অবস্থানরত বিজিবি’র অস্থায়ী ক্যাম্প-টিকে অদ্যাবধি অন্য কোন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়নি ও হচ্ছে না-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ । সেখানে দীর্ঘ্ প্রায় ৮/ ৯ বছর যাবত বিজিবি’র অস্থায়ী ক্যাম্প এখনও ভোগ দখলে থাকায় সেখানে স্থানীয় রাখাইন নৃ-গোষ্ঠী /সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব ভাষা-কৃষ্টি , সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও চর্চার-সহ ইত্যাদি কার্যক্রম এবং কোন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন বা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারছে না ।

তাই, বর্তমান সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচির বিরোধী যে কোন স্বার্থনেষী মহল ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন- কক্সবাজার জেলার স্থানীয় রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।

০৮। এমতাবস্থায়, তৎকালীন আ’লীগ সরকারের যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাননীয় প্রতি মন্ত্রী জনাব ওবায়দুর কাদের মহোদয়ের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা’র প্রেক্ষিতে তাঁর নির্দেশনার মোতাবেক কক্সবাজার জেলার রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সরকার তথা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে রামু’র রাখাইন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বড় ক্যাং এর ৫০(পঞ্চাশ) শতক জমি বিনামূল্যে দান করা হলেও তাদের দীর্ঘ্ দিনের কাঙ্খিত স্বপ্ন ও প্রাণের দাবীটি চলমান ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে আদৌ বাস্তবায়ন ও পূরণ হবে কিনা- তা- এখন প্রশ্ন ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ।

বর্তমান সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর বরাবরে অত্র কক্সবাজার জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ের মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় করতঃ তাদের নায্যাধিকার (নিজস্ব ভাষা-কৃষ্টি, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, চর্চার, উন্নয়ন-বিকশের সুযোগ-সুবিধা)প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে রামুর বড় রাখাইন ক্যাং কমিটির কর্তৃক দানকৃত জমির দলিলে বর্ণিত শর্তাদি অনুযায়ী রামুতে স্থাপিত রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট-টি আশুকরনীয় কার্যক্রমসমূহ জরুরিভাবে বাস্তবায়ন এবং সেটি দ্রুত চালু করণের প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোরদাবী জানিয়েছেন- কক্সবাজার জেলার রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ।

FB-তে পোষ্টকৃত

Maung Kyaw Hla