মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু:
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রত্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়িতে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন উপজেলার প্রথম নারী (ইউএনও) উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি ।
অত্যন্ত দুর্গম ও পাহাড়ী কৃষি নির্ভর এই উপজেলার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং জনসেবায় তিনি রেখেছেন অদম্য ভূমিকা।
এলাকাবাসীর কাছ থেকেও কুড়িয়েছেন প্রশংসার ফুলঝুরি। চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলায় এসিলেন্ড থোকে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালের ১৯ জুন যোগদান করেন ৩০ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রথম নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে। তার স্বামীও একজন বিসিএস ক্যাডার ও বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোহাম্মদ ইউনুস।

মঙ্গলবার ( ৩জুলাই) সকালে উপজেলায় সাদিয়া আফরিন কচি’র সাথে প্রতিবেদকের আলাপচারিতায় তুলে ধরেন তার সফলতা ও চেলেঞ্জিং অভিজ্ঞতার কথা। সহজভাবেই বললেন এই এলাকা নিয়ে তার আরো অনেক পরিকল্পনা ছিল। দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি এই এলাকার রাস্তাঘাট,উপবন লেকসহ অনেক উন্নয়ন কাজ করে গেছেন বলেও জানান এই প্রতিবেদককে।

স্থানীয় সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরল আবছার ও দোছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবউল্লাহর সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায়, পাহাড় ধ্বস রোধে ঝুকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শণ, ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য সরকারী ঘর নির্মাণকল্পে জায়গা পরিদর্শণ, গণশুনানির অংশ হিসেবে জমি সংক্রান্ত জটিলতায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ পাহাড়ি পরিবারসমূহের সামাজিক অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণেও ছুটে যেতেন তিনি।

একজন নারী হয়েও দুর্গম পাহাড় মাড়িয়ে ছুটে যান এক এলাকা হতে অন্য এলাকায়। সরকারী সকল সেবা পৌঁছে দিতে তিনি ছুটে যান জনসাধারণের দোরগোড়ায়। ক্লান্তহীনভাবে নিরলস কাজ করছেন পাহাড়ী বাঙ্গালীসহ সকল ধর্ম বর্ণ ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য। জানতে চাইলে কীভাবে একজন নির্বাহী অফিসার হয়ে উঠলেন সে গল্প জানালেন এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী সাদিয়া আফরিন কচি। তিনি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা পূর্ব পাড়া সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।

বাবা মাহমুদুল হক ছিলেন অত্যন্ত সৎ, মেধাবী একজন সমাজকর্মী । মা শামসুন্নাহার দুই ভাই এক বোন কে বুকে নিয়ে সংসার সামলেছেন। সাদিয়া আফরিন কচি ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সন্তান। ছোট বেলায় লক্ষ্য করেন পরিক্ষার ফলাফল হাতে পেয়েই মা ভীষণ খুশি। আর মা কে খুশি করতেই আপ্রাণ চেষ্টা করতেন ভাল ফলাফল হাতে পেতে। সফলতার সকল কিছুতেই অনুপ্রেরণা যোগাতেন তার মা। মা বাবার কথা মনে পড়তেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তার সফলতার পেছনে তার মা বাবার পাশাপাশি তার ভাইয়ের অবদানের কথাও জানান তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করেন তিনি।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি অনেক সুন্দর একটি উপজেলা। এখানে কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ বাস করে। কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন নয় বরং এখানে আমি সতঃফুর্তভাবে কাজ করতে পেরেছি। আমি সব সময় সৎ ভাবে এবং পরের উপকার হয় এমন কাজ করি।

সুতারাং আমার মনে হয়না কেউ আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আলম কোম্পানি জানান, সরকারী সেবা নিতে এলে দ্রুততম সময়েই কাঙ্ক্ষিত সেবা। করোনাকালীন সময়ে ৫টি ইউনিয়নে ছুটে গিয়েছেন সরকারী ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে। এ নিয়ে সেবাগ্রহীতারাও বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন বলেও জানান এলাকাবাসী।

সম্প্রতি সাদিয়া আফরিন কচি পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, শততার নিদর্শন, নির্ভরযোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, সহকর্মী ও সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে আচরণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে পারদর্শীতাসহ সরকারী ও দাপ্তরিক বিভিন্ন কার্যক্রমে নাইক্ষ্যংছড়িবাসী মুগ্ধ হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে তিনি বান্দরবান জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিতও হন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নিয়েও জানালেন তার কিছু পরিকল্পনার কথা। উপজেলাটিকে পর্যটনবান্ধব হিসেবে উপস্থাপনে তার ছিল কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ উপজেলায় আছে পর্যটন স্পষ্ট উপবন লেক, গয়াল প্রজনন কেন্দ্র,কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এছাড়াও বাঁকখালীর ছাগল খাইয়া সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে এবং বাইশারী-দৌছড়ী সড়ক দিয়ে সরাসরি আলীকদম পৌঁছানো সম্ভব হলে এই এলাকায় নতুন পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন আসবে এই এলাকার বাসীন্দাদের মাঝে।

তিনি যেখানেই থাকবেন সময় পেলেই ছুটে আসবেন এই উপজেলায় এমনটাই জানালেন এই ইউএনও। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের পর হইতে ঐতিহাসিক নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এর আগে কোন নারী নির্বাহী অফিসার যোগদান করেননি। প্রথম এই নারী ইউএনও পূর্ণ দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করে এ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।