মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক, রামু :
স্বপ্নের রেললাইন রামুবাসির জন্য স্বপ্ন হলেও উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নবাসির জন্য তা বর্ষা মৌসুমে অভিশাপে পরিণত হতে যাচ্ছে।
দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে রামু সদরের ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের জন্য তা চরম অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকাবাসির অভিযোগ ও সরেজমিনে দেখা যায়, ম্যাক্স কোম্পানির নির্মাণাধীন রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। রামু সরকারি কলেজের পূর্বপাশে রেললাইন জংশনের জন্য মাটি ভরাট করে ষ্টেশন ও রেললাইন তৈরি হচ্ছে। যার কারণে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু এলাকায় বাঁকখালী নদী পর্যন্ত কোন ধরণের পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না রেখে বিশাল আকারের বেড়িবাঁধ সৃষ্টি হয়েছে।
রেললাইন সৃষ্ট এই বেড়িবাঁড়ের জন্য চলতি বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা হলে ফতেখাঁরকুলের ফসলি জমি, প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবে এবং জনগণকে চরম দুর্ভোগ পড়তে হবে।
এলাকাবাসির মতে, এখনও সময় আছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রামু বাইপাস থেকে বাকঁখালী নদী পর্যন্ত ৪/৫টি ব্রীজ নির্মান করে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করলে তাদের জন্য রেললাইন স্বপ্নই হবে, আর নাহয় অভিশাপে পরিণত হবে।
তারা জানান, বাঁকখালী নদী থেকে বাইপাস সড়ক ২ কিলোমিটার পর্যন্ত মাটি ভরাট করা হয়েছে। যার কারণে বর্ষায় বৃষ্টিতে চাষাবাদী জমিসহ অনেক বাড়িঘর পানিতে ডুবে রয়েছে এবং জনগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এই ২ কিলোমিটার রেললাইনে ও ষ্টেশনের মধ্যে কোন ধরনের পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
তাদের মতে, চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যায় প্লাবিত হলে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ৫/৬টি ওয়ার্ড পানিবন্দি হয়ে যাবে। অতি শীঘ্রই পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
রামুতে স্বপ্নের রেললাইনে নেই পানি নিস্কাষণ ব্যবস্থা, চাষাবাদ ও জনজীবন হুমকির মুখে
সমাজকর্মী জাহেদ হোছাইন চৌধুরী বাদল জানান, রেললাইনে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না করলে কৃষি জমিতে চাষাবাদের অনিশ্চয়তা দেখা দেবে এবং অনেক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাবে। বতর্মানেও বৃষ্টির পানিতে কিছু ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।
একাধিক কৃষক বলেন, এই রেললাইন ষ্টেশনের সড়ক আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ঐতিহ্যবাহী মল্লনের বিলের ব্যাপক চাষাবাদ বিলীন হয়ে যাবে।
পরিদর্শনে দেখা যায়, রেললাইনের ষ্টেশনের মাটির স্তুপগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় ২০ ফুট। মনে হয়, একটা অনেক উচুঁ পাহাড়।
রামুর সচেতন মহলের মতে, অন্য এলাকায় রেললাইনে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা থাকলেও বাইপাসের দক্ষিণে বাকঁখালী নদী পর্যন্ত পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তারা অতি দ্রুত পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে আন্ডারপাস, ওভারপাস, কালভার্ট ও মাইনর ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে ২২৩টি। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৭৬টির। বাকিগুলোর কাজ চলছে।
টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স কোম্পানির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ট্রেস ম্যাপে বাইপাস বিশ্বরোড থেকে বাঁকখালী নদী পর্যন্ত কোন কালভার্ট, ব্রীজের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের প্ল্যান মতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে টিকাদারী প্রতিষ্টান ম্যাক্সের কন্ট্রাকশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন জানান, বাইপাস থেকে বাকঁখালী নদী পর্যন্ত পানি নিষ্কাষণের কোন ব্যবস্থা নেই। এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ ক্ষতিগ্রস্তরা প্রকল্প ব্যবস্থাপকের নিকট অবহিত করলে পরে ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।