বার্তা পরিবেশক:
সাড়ে ছয় কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে চকরিয়ায় ম্যানগ্রোভ এসেটস লিঃ এর সাবেক বহিস্কৃত এমডি, দূর্নীতির বরপুত্র হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি পাওয়া, জামায়াত নেতা মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গত বুধবার (২৯ জুন) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তামান্নাহ ফারাহ’র আদালত মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। মামলার বাদি ম্যানগ্রোভ এ্সেটস লিমিটেডের পরিচালক মাহমুদুল করিম।

জানা যায়, চকরিয়ার ডুলাহাজারস্থ কাটাখালির জনৈক মোহাম্মদ হোসেন এর ছেলে এবং এমএলএম কোম্পানির ওয়ারেন্টভুক্ত পরিচালক হেলাল উদ্দিনের ভাই মোজাম্মেল হক ২০১২ইং সালে চকরিয়ার ম্যানগ্রোভ এসেটস লিঃ নামীয় কোম্পানির এমডি হিসেবে নিয়োগ পান।এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অল্প সময়েই “আংগুল ফুলে কলা গাছ” বনে যান মোজাম্মেল হক।

দীর্ঘদিন তিনি কোম্পানির তহবিল তছরুপ করে হিসাব দেন নাই এবং নির্দিষ্ট সময়ে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সম্পন্ন করেন নাই বলে জানা যায়।২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী মাত্র একটি এজিএম করেছেন।২০১৮ সালের সেই এজিএম-এ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন না নিয়ে যেনতেন ভাবে বার্ষিক হিসাব পেশ করায় উক্ত হিসাব সাধারণ সদস্যরা গ্রহণ না করে কোম্পানির তৎকালীন পরিচালক (বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সোহরাব মোস্তফা রিকনকে হিসাব সংশোধনে সহযোগিতা করার দায়িত্ব দেন। কিন্তু মোজাম্মেল হক তার দায়িত্বকালীন উক্ত হিসাব সংশোধন এর কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় এবং জনৈক আব্দুস সালামকে কোম্পানির নির্মাণাধীন মার্কেট ইসলাম প্লাজার প্রথম বিক্রিত ২৪নং দোকান বিক্রয়ে চুরি ও আত্নসাৎকৃত ২ লাখ টাকা বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর ২৬/০৬/২০১৭ ইং তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানিকে ফেরত প্রদানের তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় উপস্থিত সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা মোজাম্মেল হকের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক আপত্তি তুলে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।উক্ত তদন্ত কমিটি প্রায় তিন মাস তদন্ত করে এমডি মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধকোটি টাকার আত্নসাত এবং অনিয়মের অভিযোগ ২০১৮ সালে তৎকালীন পরিচালনা পরিষদ বরাবর জমা দিলে একই দিন পরিচালনা পর্ষদ উক্ত বিষয়ে মোজাম্মেল হককে শোকজ করেন। মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে শোকজ এর জবাব ২০১৮ সালের ২৭ মে এর মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ বরাবর প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।কিন্তু উক্ত শোকজের জবাব দিতে মোজাম্মেল হক বারবার সময় চেয়েও দীর্ঘ দুই বছর কালক্ষেপণ করেন বলে জানা যায়।পরবর্তীতে পরিচালনা পরিষদের চাপে প্রায় দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই দায়সারা ভাবে হিসাব ও শোকজ এর জবাব দেওয়ার পর বিধি মোতাবেক উক্ত শোকজের জবাব পর্যালোচনার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের অপর একটি কমিটি পর্যালোচনা করে এবং প্রাপ্ত হিসাব অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি ও চার্টার্ড একাউন্টেন্ট কর্তৃক অডিট করার পর মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ৬,৫৬,৫৩,২৩৬/- (ছয় কোটি ছাপ্পান্ন লক্ষ তেপ্পান্ন হাজার দুইশত ছত্রিশ) টাকা অনিয়ম ও তহবিল তছরুপের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে মোজাম্মেল হকের উপস্থিতিতে বিগত ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ইং তারিখে অনুষ্ঠিত কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)- এ উপস্থিত শেয়ারহোল্ডারবৃন্দ সর্বসম্মতভাবে মোজাম্মেল হককে এমডি পদ থেকে অপসারণ করে এবং তছরুপকৃত অর্থ পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে কোম্পানির একাউন্ট বরাবর ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেয়।

উক্ত সময়ের মধ্যে তছরুপকৃত অর্থ ফেরত প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে কোম্পানির পরিচালক মাহমুদুল করিম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অপর মামলা ৬৯২/২১ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট গোলাম ফারুক কায়সার জানান, আমার মক্কেলের অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য আবেদনটি আদালত আমলে নিয়ে আসামী মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন। উল্লেখ্য-চকরিয়া জামায়াতে ইসলামী (দক্ষিণ) এর আমীর মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা, অন্যের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অসংখ্য মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে মোজাম্মেল এসব ঘটনায় জেলও খেটেছে।