এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ১৪টি স্লইচ গেটের নতুন জলকপাট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব স্লইচ গেটের জলকপাট গুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যহত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আসছে। সদর ইউনিয়নে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আমন চাষে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে থাকে। বুধবার বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোড়র্ের নিয়ন্ত্রাণাধীন পেকুয়া সদর ইউনিয়নের দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে থাকা ৩৬ নং স্লইচের দুইটি গেইটে নতুন জলকপাট দিয়ে সচল করে দেওয়া হয়েছে। এতে সদর ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার একর জমিতে আমন চাষ সুনিশ্চিত হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়- পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ১৪টি স্লইচ গেটের মধ্যে অনেক গুলো স্লুইচ গেটের জলকপাট নেই। কোন কোন স্লইচ গেটে দুইয়েকটি জলকপাট থাকলেও সেগুলোও অনেকটা নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া স্লইচ গেট গুলোতে কিছু প্রভাবশালী মহল রক্ষাণাবেক্ষণের নামে স্লইচ গেট গুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত জাল বসিয়ে মাছ ধরে।

এসব কারণে বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি বের হতে পারেনা। জলকপাট না থাকায় নদী থেকেও পাহাঢ়ী ঢলের পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে। এতে বর্ষায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণাঞ্চল জলমগ্ন থাকে। প্রায় এক হাজার একরের জমিতে আমন চাষাবাদে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে আসছে প্রতি বছর। এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছেন স্লইচ গেট গুলোতে নতুন জলকপাট দিয়ে এবং প্রভাবশালীদের কবল থেকে স্লইচ গেটের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে সুষ্টু পানি ব্যবস্থাপনার। কিন্তু কৃষকের এই প্রাণ প্রিয় দাবীটি এতোদিন কেউ কর্ণপাত করেননি।

বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ড় সূত্রে জানা যায়: চকরিয়া পেকুয়ার এমপি জাফর আলমের সুপারিশ নিয়ে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম পেকুয়া সদর ইউয়িনের ১৪টি স্লইচ গেটে নতুন জলকপাট নির্মাণ করে দেয়ার জন্য একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনও একটি রেজুলেশন দেন। এবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে স্লইচ গেটগুলোর জলকপাট নির্মাণ করে সেগুলো গেটে বসানো শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পেকুয়া শাখা কর্মকর্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান; ইতোমধ্যে ৩টি স্লইচ গেটে নতুন জলকপাট লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্লইচ গেট গুলোতেও নতুন জলকপাট বসিয়ে দেওয়া হবে। পেকুয়ার নন্দীর পাড়ার কৃষক মোজাফ্ফর আহমদ জানান; নতুন স্লইচ গেট দেওয়া হলেও রক্ষাণাবেক্ষণের নামে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব স্লইচ গেট নিয়ন্ত্রণে রেখে জাল বসিয়ে মাছ ধরে। এতে ভেতরের পানি বের হতে পারে না। এ অবস্থা বছরের পর বছর চলে আসছে। তিনি আরও জানান; বর্ষার সময় কোন কৃষক নিজেদের এলাকায় বীজ তলা তৈরী করতে পারে না। বাইরের এলকায় গিয়ে বীজ তলা তৈরী করতে হয়। রোয়া দেওয়া সময় বাইরের এলাকা থেকে চারা আনতে হয়। এতে কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ হয়। এমন হয় কোন কোন বছর জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়ে কৃষকদের আমনের রোয়া নষ্ট হয়ে ফসল হানি ঘটে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবীর প্রেক্ষিতে বুধবার পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোড়র্ের লোকজনদের সহযোগিতায় নন্দীর পাড়ার দক্ষিণে ৩৬ নং দুইট স্লইচ গেট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কব্জা থেকে উদ্ধার করে ভেতরের দিকে আটকে রাখা জলকপাট তুলে দিয়ে পানি চলাচলের সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতে পেকুয়া সদরের ভেতরের জলাবদ্ধতার পানি দ্রুত বের হয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা আশা প্রকাশ করেছেন এভাবে পানি বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিকতার সৃষ্টি না হলে এ বছর এক হাজার একর জমিতে আমন চাষাবাদ সুনিশ্চিত হবে।

স্লইচ গেট গুলোর ভেতরের দিকের জলকপাট তুলে দিয়ে বাইরের দিকে জলকপাট গুলো লাগিয়ে দেওয়ায় এলাকার কৃষকের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। বুধবার পেকুয়ার নন্দীর পাড়া চৌমুহনী এলাকায় প্রধান সড়কে কৃষকরা আনন্দ মিছিল করেছে। পেকুয়ায় পানি ব্যবস্থাপনার জন্য সরাসরি সহযোগিতা দেওয়ায় কৃষকরা স্থানীয় এমপি জাফর আলমের প্রশংসা করেছেন।

সদর ইউনিয়নের কৃষকদের পক্ষে কয়েকজন কৃষক প্রতিনিধি চকরিয়া পেকুয়ার এমপি জাফর আলমের সঙ্গে চকরিয়ার পালাকাটাস্থ বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন। এসময় এমপি জাফর আলম কৃষকদের উদ্দেশে বলেন; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। এ সরকারের আমলে কৃষকদের স্বার্থহানি হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। পেকুয়া সদর ইউনিয়নে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যারাই স্লইচ গেট বন্ধ করে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পেকুয়া সদরে যাতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় পড়ে এক ইঞ্চি জমিও পতিত না থাকে তার জন্য যা যা করা দরকার সব ব্যবস্থা করবেন বলে কৃষকদের আস্বস্ত করেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, কৃষক প্রতনিধি নাছির উদ্দীন, আতিক উদ্দীন, মোজাফফর আহমদ ও আবদুল হাকিম প্রমুখ।