সিবিএন ডেস্ক:
করোনা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও সেখান থেকে পিছিয়ে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বড় এ দুই পাবলিক পরীক্ষা ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করতে যাচ্ছে। বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে সেটি নির্ধারণে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতিকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ সংক্রান্ত গাইডলাইন দেয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয় থেকে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০২১ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই পাস করানো হতে পারে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ২৫ শতাংশ ও এসএসসি পরীক্ষার ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়নের ভিত্তিতে ফলাফল দেয়া হতে পারে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি পরীক্ষার ফলে ৫০ শতাংশ আর বাকি ৫০ শতাংশ নম্বর স্কুল পারফরম্যান্স বা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা চূড়ান্ত করে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। এইচএসসির প্রশ্নপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে পরীক্ষা মূল্যায়ন সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে। সেই কমিটির গাইডলাইন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে পাঠালে সেটি অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’

শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এক বছরের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে এসএসসির জন্য ৬০ দিনের ও এইচএসসির জন্য ৮৮ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হলেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে তা পড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অথবা বিকল্প পদ্ধতিতে পাস না করালে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। এ কারণে বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করাতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার পরিকল্পনা চলছে।

জানা যায়, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরিতে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আহ্বায়ক করে এতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রয়েছে। পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প কোন পদ্ধতিতে দুই স্তরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যায় তারা সে সংক্রান্ত গাইডলাইন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সেটি যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হবে। সেটি অনুসরণ করে বোর্ডগুলো এসএসসি-এইচএসসির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করবে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব সে সংক্রান্ত পরামর্শ ও গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’

এদিকে চলতি বছরের এ দুই স্তরের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের আওতায় আনার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে এর মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্প পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি এমন ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হওয়ায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করানোর পরিকল্পনা চলছে। কীভাবে এটি শুরু করা যায় সেটি নিয়ে কাজ চলছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু এ দুই স্তরের শিক্ষার্থীরা গত এক বছরের সিলেবাস থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ কারণে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তাদের শিখন-জ্ঞান তৈরি করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষায় ঝুঁকি থাকায় এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, ‘চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে কীভাবে পাস করানো যায় সেটি নিয়ে নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমরা তা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’