সিবিএন ডেস্ক:
কাজের উদ্দেশ্যে যারা সৌদি আরবে যাবেন বা চলে গেছেন তাদের সেখানে হোটেলে কোয়ারেন্টিনের খরচের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এই ভর্তুকির পরিমাণ জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা। সরাসরি একাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে কর্মী কিংবা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) এই চেক হস্তান্তর করা শুরু করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এদিন ২২ জন কর্মীর পরিবারের হাতে এই চেক তুলে দেওয়া হয়।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সৌদি আরবে কোনো কর্মী গেলে তাদেরকে কমপক্ষে সাত দিন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। সে কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুবিধার্থে কোয়ারেন্টিনের খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গত ২০ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি শেষে যারা নিজ খরচে সৌদি আরবে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালন করেছেন বা করবেন, তাদেরকে এই ভর্তুকি দেওয়া হবে। এরপর আবার নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়, বিএমইটির স্মার্টকার্ডধারী কিংবা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে নিবন্ধিত সৌদিগামী নতুন-পুরাতন সকল প্রবাসী কর্মী এই ভর্তুকি পাবেন। সংশ্লিষ্ট কর্মীরা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড অথবা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে কিংবা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে ফ্লাইটের দিন বহির্গমনের আগে বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে জমা দিতে পারবেন।

বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সূত্রে জানা যায়, ৭ জুন থেকে আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয়। প্রথম এক দুই দিন কম সংখ্যক আবেদন জমা পড়লেও গত কয়েকদিনে গড়ে ২ হাজার করে আবেদন জমা পড়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯০০টি আবেদনের মধ্যে ৭ হাজার আবেদন সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকি আবেদনগুলোতে ত্রুটি থাকায় সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি।

জমাকৃত আবেদনে আবার ১৪ ধরনের গড়মিল পেয়েছে কল্যাণ ডেস্ক কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, অনেক আবেদনপত্রে যেসকল ভুল বেশি দেখা গেছে, সেগুলো হচ্ছে– আবেদনকারীর মনোনীত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের নাম, ব্যাংক হিসাব নম্বর ভুল কিংবা নেই, মনোনীত ব্যক্তির নাম অস্পষ্ট, মোবাইল নম্বর ভুল কিংবা নম্বর বন্ধ, একই ব্যাক্তি একাধিক আবেদন, একাধিক আবেদন পত্রে একই ব্যাংক হিসাব নম্বর, কোন কোন আবেদন পত্রে স্বাক্ষর নেই, মনোনীত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখ নেই ইত্যাদি।

এছাড়া নারী কর্মীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের নিজস্ব একাউন্ট নম্বরের পরিবর্তে রিক্রুটিং এজেন্সির একাউন্ট নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে যিনি ফর্ম পূরণ করে দিয়েছেন কর্মীর বদলে তিনি নিজের ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিয়ে দিয়েছেন। পাশপাশি ব্যাংক একাউন্টের জায়গায় এজেন্ট ব্যাংকিং নম্বর দেওয়া হয়েছে। অনেক আবেদনে স্মার্ট কার্ডের তথ্য নেই, পাসপোর্টে ছাড়পত্রের পাতা নেই।

যেসকল রিক্রুটিং এজেন্সি নিজেদের একাউন্টের তথ্য দিয়ে আবেদন করছে, সেক্ষেত্রে করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি সেটা হচ্ছে ব্যাংক টু ব্যাংক। যদি রিক্রুটিং এজেন্সি কারও পক্ষে আবেদন করে, ওখানে আমরা দেখবো এই ব্যাংক একাউন্ট কার। যদি প্রবাসী কর্মীর হয় তাহলে সেটা বিবেচনায় আনা যাবে। কিন্তু টাকা আমরা কোনো রিক্রুটিং এজেন্টকে দিব না। কোন প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হবে সেটা জানা আছে সবার, কিন্তু তার বাইরে গিয়ে কেউ যদি আবেদন করে সেটা হবে না।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রবাসী ভাই-বোনদের একটা সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রবাসীদের কল্যাণে নানা সময় নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। সব এখনও সবার হাতে পৌঁছায়নি। কিন্তু অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রবাসীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা প্রধানমন্ত্রী করেন। সৌদি আরব ২০ মে থেকে সিদ্ধান্ত নেয় কোয়ারেন্টিনের। আমার মনে হয় এই বিষয়টি বুঝতে আমাদের বেশি সময় লাগেনি।