বিবিসি বাংলা: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামিতে একটি ১২ তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় অন্তত একজন নিহত এবং ৯৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

মিয়ামি-ডাডের মেয়র ড্যানিয়েল লেভিন-কাভা জানিয়েছেন, ভবনটিতে যারা অবস্থান করছিলেন সেই সংখ্যা তাদের হিসাব মতে ১০২ জন এবং এখনও ৯৯ জনের কোন খোঁজ মেলেনি।

তবে ভবন ধসের মুহূর্তে বহুতল ওই ভবনটিতে আসলেও কতো মানুষের বসবাস ছিল – সেটি পরিষ্কার নয়।

ভবনটি ধসে পড়ায় ওই কমপ্লেক্সের ১৩০টি ইউনিটের অর্ধেক তছনছ হয়ে গেছে। তবে ভবন ধসের কারণ এখনও জানা যায়নি।

সার্ফসাইড শহরে এই ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল ১৯৮০ সালে।

যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন লাতিন আমেরিকান অভিবাসী রয়েছেন বলে ওই দেশগুলোর কনস্যুলেট থেকে জানানো হয়েছে।

প্যারাগুয়ের ফার্স্ট লেডির এক স্বজনও নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন বলে, প্যারাগুয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

উদ্ধারকারীরা ফার্স্টলেডি সিলভানা লোপেজ মোরেইরার বোন, বোনের স্বামী, তাদের তিন সন্তান ও গৃহকর্মী কারও সাথেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।

উদ্ধারকারীরা ৩৫ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলেছে বলে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দশজনকে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উদ্ধারকারী ও তল্লাশি দলগুলো ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া একটি পার্কিং গ্যারেজ থেকে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা ধ্বংসাবশেষের নীচে বেঁচে থাকা মানুষের সন্ধান পেয়েছেন।

শতাধিক উদ্ধারকারী উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন।
শতাধিক উদ্ধারকারী উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন।

তল্লাশি চলাকালীন একটি ছোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে ২০ মিনিটের মধ্যেই তা নিভে যায় বলে জানান মিয়ামি-ডাডের দমকল বাহিনীর প্রধান রাইডে জাদাল্লাহ।

তিনি আরও জানান যে, ধ্বংসস্তূপের নীচে কোথাও কেউ আছে কিনা – সেটা অনুসন্ধানের জন্য তারা সোনার যন্ত্র, অনুসন্ধানী ক্যামেরা পাশাপাশি বিশেষত প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করছেন।

তবে ধ্বংসস্তূপ যেকোন সময় সরে গিয়ে আরেকটি ধসের আশঙ্কা থাকায় উদ্ধারকাজের এই পদ্ধতি বেশ ধীরে এবং নিয়ম মেনে করা হচ্ছে।

সার্ফসাইডের মেয়র চার্লস বারকেট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ভবনের পেছনের দিকে, এক তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি অংশ সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, অগ্নিকাণ্ড ও উদ্ধারকাজ এখনও তল্লাশি ও উদ্ধার তৎপরতার মধ্যেই রয়েছে।

“এরকম বিশাল ভবন ধসে যাওয়া সত্যিই বেদনাদায়ক,” তিনি বলেন।

ঘটনাস্থলে বিবিসির উইল গ্রান্ট বলেছেন যে ভেঙে পড়া ভবন থেকে কয়েক ব্লক দূরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে নিখোঁজদের স্বজনরা জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন তাদের প্রিয়জনের অবস্থা জানার জন্য।

তবে তাদের কাছে সবচেয়ে খারাপ খবর আসার আশঙ্কাই বেশি।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে তিনি অপেক্ষা করছেন যে কখন ডিসান্টিস জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন।

দেশটির কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (ফেমা) কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে আছে।

মি. বাইডেন বলেন, “আমি ফ্লোরিডার জনগণকে বলছি, কেন্দ্রীয় সরকার দিতে পারে এমন সব সহায়তা আপনারা চাইতে পারেন, আমরা অপেক্ষা করছি, কেবল আমাদের জানান। আমরা সেখানে থাকব।”

Rescuers in Surfside উদ্ধার তৎপরতা।

‘৯/১১-এর মতো দেখে মনে হয়েছিল’

১২ তলা চ্যাম্পলাইন টাওয়ারগুলির অবস্থান ৮৭৭৭ কলিন্স অ্যাভিনিউতে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মিয়ামি সমুদ্র সৈকতের উত্তরে সার্ফসাইড শহরে এই কলিনস অ্যাভিনিউ।

স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তিনি ভবনটি ধসে পড়ার শব্দ শুনতে পান।

তিনি সিবিএস মিয়ামিকে বলেন, “আমি একটা গমগম শব্দ শুনেছিলাম এবং ভেবেছিলাম হয়তো কোন মোটরসাইকেলের শব্দ। ঘুরে তাকাতেই দেখলাম একটা ধুলোর কুণ্ডলি আমাদের দিকে আসছে।”

“আমাদের একটা কথাই মনে হচ্ছিল যে এসব ‘কি হচ্ছে?’ আমরা আমাদের শার্ট দিয়ে মুখ ঢেকে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং নিরাপত্তা কর্মীকে দেখে বলি যে ‘কী হয়েছে?’ এবং তিনি বলেন যে ভবনটি ধসে গেছে। “

প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে ধ্বংসস্তূপ দেখে সিএনএনকে জানান যে, “দেখে মনে হয়েছিল ৯/১১ এর মতো ঘটনা”। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পর সেটি ধসে পড়ে।

৫০ বছর বয়সী সান্টো মেজিলের স্ত্রী একজন বয়স্ক প্রতিবন্ধী নারীর রাত্রীকালীন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন।।

তিনি চ্যাম্পলাইন টাওয়ারের তিনটি বিল্ডিংয়ের একটির নবম তলায় কাজ করতেন। ওইদিন রাতে তার কল পেয়ে জেগে ওঠেন মি. মেজিল। এরইমধ্যে ভবনটি ধসে পড়ে।

“তিনি [মি. মেজিলের স্ত্রী] জানান যে একটি বড় বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনেছেন,” মিয়ামি হেরাল্ডকে বলেছেন মি মেজিল, ” আমার কাছে মনে হচ্ছিল বুঝি ভূমিকম্প হচ্ছে।”

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তার স্ত্রীও ছিলেন।

ধসে পড়া ভবনটি পাশের এক বাসিন্দা সিবিএসের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন: “বিল্ডিং কাঁপতে লাগল এবং তারপরে আমি জানালার বাইরে তাকালাম এবং কিছু দেখতে পারলাম না, আমি ভেবেছিলাম ঝড়ের মতো কিছু হয়েছে।”

“ধুলো পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর দেখি এতো বড়, ভবনের পিছনের দুই-তৃতীয়াংশ ধসে পড়েছে।”