ধর্ম ডেস্ক:
একজন মুমিনের অজু, নামাজ ও জামাআতের আমল কেমন হবে? প্রতিদিন কেমন নামাজি হিসেবে নিজেকে দেখতে চায় মুমিন? নামাজের প্রতি কেমন গুরুত্ব থাকা জরুরি? কেমন নামাজি ছিলেন বিখ্যাত তায়েবি হজরত সাঈদ বিন মুসায়্যি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি? যার নামাজ সত্যিই মুমিনের জন্য অনুপ্রেরণা-
বিখ্যাত তাবেয়ি আল্লামা সাঈদ বিন মুসায়্যিব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। ইসলামের প্রথম সারির তাবেয়ি ছিলেন তিনি। নামাজ ও জামাআতের প্রতি তাঁর আসক্তি যে কাউকে নামাজের দিকে আগ্রহী হতে উৎসাহ যোগাবে। জীবনের অর্ধ শতাব্দী তথা ৫০ বছর তিনি রাতের প্রথমাংশের অজুতে পড়েছেন ফজরের নামাজ।
বিখ্যাত এ সাহাবির সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো- তিনি সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মেয়ের জামাতা। ইলম ও আমলে তিনি গভীর প্রজ্ঞাবান ও একনিষ্ঠ ছিলেন। এ কারণেই হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর কাছে নিজের মেয়েকে বিবাহ দিয়েছিলেন।
তাঁর ছাত্রদের বক্তব্য থেকেই বুঝা যায়, তিনি আমল-ইবাদত তথা কেমন নামাজি ছিলেন। যিনি জীবনে কখনো মসজিদে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখেননি যে- তিনিও মসজিদে গিয়েছেন, আর তখনই মসজিদ থেকে মানুষ বেরিয়ে আসছে।
১. হজরত ইবনে হারমালাহ
তাঁর সুযোগ্য ছাত্র হজরত হারমালাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হজরত নিজেই বলেছেন-
مَا فَاتَتْنِي الصَّلَاةُ فِي الْجَمَاعَةِ مُنْذُ أَرْبَعِينَ سَنَةً
চল্লিশ বছর যাবত আমার জামাআতে নামাজ ছুটেনি।
২. হজরত ওসমান বিন হাকিম
হজরতের সুযোগ্য ছাত্র ওসমান বিন হাকিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি হজরতকে বলতে শুনেছি-
مَا أَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ مُنْذُ ثَلَاثِينَ سَنَةً إِلَّا وَأَنَا فِي الْمَسْجِدِ
আমি মসজিদে যাওয়ার আগে ত্রিশ বছর যাবত মুয়াজ্জিন আজানও দেয়নি। অর্থাৎ মুয়াজ্জিনের আজান দেওয়ার আগেই ৩০ বছর ধরে আগেই মসজিদে গিয়েছিলেন তিনি।
৩. হজরত মায়মুন বিন মিহরান
তাঁর আরেক ছাত্র হজরত মায়মুন বিন মিহরান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
مَكَثَ أَرْبَعِينَ سَنَةً لَمْ يَلْقَ الْقَوْمَ قَدْ خَرَجُوا مِنَ الْمَسْجِدِ وَفَرَغُوا مِنَ الصَّلَاةِ
হজরত সাঈদ বিন মুসায়্যিব রাহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবনের ৪০ বছর ধরে কখনো এমন হয়নি যে, তিনি গিয়ে দেখেছেন- ‘মসজিদ থেকে মুসল্লিরা নামাজ পড়ে বের হয়ে আসছেন।’
৪. জীবনভর মসজিদে উপস্থিত হওয়া সম্পর্কে হজরত হামালাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরও বলেন-
مَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مُنْذُ أَرْبَعِينَ سَنَةً إِلَّا وَسَعِيدٌ فِي الْمَسْجِدِ
চল্লিশ বছর যাবত আজানের আগে তিনি মসজিদে উপস্থিত থাকতেন।
বিখ্যাত এ সাহাবি ছিলেন সুন্নাতে নববির অনুসরণীয় এক মহান ব্যক্তিত্ব। শুধু নামাজের ব্যাপারে তার মূল্যয়নই যে কাউকে নামাজি হতে উদ্বুদ্ধ করবে। দ্বীন ও ইসলামের প্রতি কতটা একনিষ্ঠতা থাকলে অজু, নামাজ ও জামাআতের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পারেন একজন মানুষ।
যে কাউকে পরিপূর্ণ নামাজি ও আমলি হওয়ার জন্য তার সম্পর্কে এ উক্তিটিই যথেষ্ট। তার অজু, নামাজ ও জামাআত সম্পর্কে অন্যত্র এসেছে-
صَلَّى سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ الْغَدَاةَ بِوَضُوءِ الْعَتَمَةِ خَمْسِينَ سَنَةً
তিনি ৫০ বছর ধরে রাতের প্রথম অংশের (মাগরিব-ইশার) ওজু দ্বারা ফজরের নামাজ পড়েছেন। নিশ্চয়ই তা ছিল জামাআতে নামাজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, অজু, নামাজ ও জামাআতের আমলের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো নিয়মে সাহাবায়ে কেরাম ও তায়েবিদের অনুসরণে ইলম ও আমলে নিজেদের সমৃদ্ধ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহাবি-তাবেয়িদের আলোকিত জীবনের অনুসরণ ও অনকুরণে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করে তোলার তাওফিক দান করুন।। ইত্তেবায়ে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।