বলরাম দাশ অনুপম :
জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এর উদ্যোগে এবং জার্মান ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে একাডেমীর সহযোগীতায় কক্সবাজার জেলার একটি হোটেলে জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা বিষয়ক একটি তিনদিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) এই কর্মশালার শেষ দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ৩০ জন স্থানীয় সাংবাদিকদের সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
তিনদিনব্যাপী এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেনের কমিউনিকেশন অফিসার মাহমুদুল করিম, ডয়েচে ভেলে কক্সবাজারের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং ট্রেইনার – মাইনুল ইসলাম খান এবং ডয়েচে ভেলে কক্সবাজারের কো-প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং ট্রেইনার – মাফিয়া মুক্তা।
কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে বিশেষ ট্রেনার হিসেবে জার্মানী থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন ডয়েচে ভেলে একাডেমীর ডিসপ্লেসমেন্ট এন্ড ডায়লগ প্রকল্প পরিচালক এবং ট্রেনার আন্দ্রিয়া মার্শাল। তৃতীয় দিনে ট্রেনার হিসেবে ব্যাংকক থেকে যুক্ত হয়েছিলেন ইউ এন উইমেনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের রিজিওনাল কমিউনিকেশন এন্ড ক্যাম্পেইন স্পেশালিষ্ট গিজেম ইয়ারবিল। এছাড়াও এই দিনে জেন্ডার সমতা নিয়ে ইউএন উইমেনের জেন্ডার প্রোগ্রাম অ্যনালিস্ট নাদিরা ইসলাম একটি সেশন পরিচালনা করেন।
কর্মশালাটির মূল লক্ষ্য ছিল গণমাধ্যমে নারী ও পুরুষের ভারসাম্য রক্ষা, গণমাধ্যমে নারীকে সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপন, নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক প্রতিবেদনে সংবেদনশীল শব্দের ব্যবহার এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাম্যক ধারণা দেওয়া। এছাড়াও গণমাধ্যমে সংবাদ এবং অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের ভারসাম্যমুলক উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করা হয়।
কর্মশালায় উপস্থিত সাংবাদিকগণ জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা এবং প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা নিয়ে গ্রুপ ওয়ার্কে অংশগ্রহণ করেন।
তিনদিনব্যাপি কর্মশালার শেষ দিনে সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের ব্যাপারে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের পেশায় নারীরা কতটুকু ভূমিকা রাখার সুযোগ পাচ্ছেন তা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। গতানুগতিক চিন্তা-ধারায় নারীদের সংজ্ঞায়িত না করে নারীর ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করার জন্যে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানানো হয়।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা বলেন, ”এটি একটি শিক্ষণীয় এবং অংশগ্রহণমূলক প্রশিক্ষণ ছিলো। জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলি প্রতিবেদন তৈরির সময় আমাদের মাথায় রাখা উচিত তা জানতে পেরেছি।”
ফ্লোরা ম্যাকুলা, ইউএন উইমেন কক্সবাজার সাব-অফিসের প্রধান তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ”সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে এবং মিডিয়ায় নারীকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে গতানুগতিক চিন্তাধারার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সমাজে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। তিনি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে তুলে ধরতে মিডিয়াকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।”
ডিডাব্লিউডি অ্যাকডেমীর প্রশিক্ষক মাইনুল ইসলাম খান বলেন, ”এই তিনদিন আমরা কতটা আনন্দ নিয়ে শিখেছি তা এই রুমের দেয়ালের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এটি হচেছ এ ধরনের প্রশিক্ষণের শুরু। আমরা ভবিষ্যতে আরও এধরণের প্রশিক্ষণ করাতে চাই।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্য আবু তাহের চৌধুরী, সভাপতি, কক্সবাজার প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করার জন্য ইউএন উইমেনকে ধন্যবাদ জানান। এই প্রশিক্ষণ-কর্মসূচী সাংবাদিকদের আরও জেন্ডার-সংবেদনশীল উপায়ে তাদের কাজ চালানোর জন্য কার্যকরী ভুমিকা পালন করবে বলে আশা করেন। তিনি সাংবাদিকদের জাতীয় গণমাধ্যম আইন অনুসরণ করে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানান।
মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা, অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার তার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ”সাংবাদিকতা একটি সংবেদনশীল পেশা। কেবল জেন্ডার-সংবেদনশীল নয়, প্রতিটি প্রতিবেদন তৈরি করার ক্ষেত্রেই সংবেদনশীলতার বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। আমরা কক্সবাজারের উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করব। কক্সবাজারের প্রচুর বিদেশী রয়েছে; আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নতি করা উচিত যাতে আমরা আন্তর্জাতিক পরিবেশে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারি। আমি ইউএন উইমেন এবং সমস্ত ইউএন এজেন্সিকে অনুরোধ করছি যে তারা এ জাতীয় প্রশিক্ষণ যেনো নিয়মিত আয়োজন করে, যাতে স্থানীয় সাংবাদিকদের দক্ষতার আরও উন্নয়ন হয়।”
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।