আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক সম্মেলনকে সামনে রেখে রাশিয়া পৌঁছেছেন।

মঙ্গলবার (২২ জুন) থেকে তিন দিন মস্কোয় অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন জান্তাপ্রধান হ্লাইং।

১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এটা মিন অং হ্লাইংয়ের দ্বিতীয় বিদেশ সফর। এপ্রিলে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় গিয়েছিলেন।

নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয় অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ওই নির্বাচনকে ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ বললেও জনতার রায় মানেনি দেশটির সেনাবাহিনী। ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয় জান্তা। আটক হন সু চিসহ মিয়ানমারের প্রভাবশালী গণতন্ত্রকামী নেতারা। ঘুষ নেওয়া, তথ্য গোপন আইন ভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগে সু চির বিচার চলছে।

তবে মিয়ানমারের জনতা সেনা অভ্যুত্থান মেনে নেয়নি। সু চির মুক্তি ও সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে কয়েক মাস ধরে উত্তাল রয়েছে মিয়ানমারের রাজপথ। চলছে বিক্ষোভ। সঙ্গে সেনাদের দমন–পীড়ন। এখন পর্যন্ত সেনা-পুলিশের গুলিতে মিয়ানমারে আট শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। আটক হয়েছেন সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার মানুষ। জান্তার শাসন হটাতে মিয়ানমারে ‘ছায়া সরকার’ গঠন করেছে ক্ষমতাচ্যুত রাজনীতিকেরা।

নিজ দেশের জনগণের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করে দমন–পীড়নের জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন জান্তাপ্রধান হ্লাইং। পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের সেনাসদস্য ও সেনাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরপরও কমেনি জান্তার দমন–পীড়ন। পাল্টা–আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন সেনাশাসনের বিরোধীরা। দেশটিতে প্রায় প্রতিদিনই দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলছে। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

চলমান অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে আসিয়ান। এ জন্য আঞ্চলিক সংস্থাটির শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জাকার্তা গিয়েছিলেন জান্তাপ্রধান হ্লাইং। তবে এখনো দৃশ্যমান কোনো সুফল মেলেনি। সমঝোতা হয়নি দুই পক্ষের। একই সঙ্গে বন্ধ হয়নি সংঘাত, রক্তপাত।

শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমানকে নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে নিজ দেশের ওপর জান্তার সহিংসতা ও প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারের নিন্দা জানানো হয়েছে। তা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটিতে সমরাস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে জাতিসংঘের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে শনিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একপক্ষীয় তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘ।