সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
আজ ২০শে জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হিসেবে সরকারের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু সুরক্ষা, ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন (ওয়াশ) এর মতো বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মপরিকল্পনা করেছে ব্র্যাক। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সংস্থাটি। এই পর্যন্ত ব্র্যাকের তিনটি প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার, ৮টি হেলথ পোস্টের মাধ্যমে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ প্রায় ১২ লাখ ৩ হাজার ৬২৫ জন বহিরাগত রোগিদের কনসালটেশন সেবা দেওয়া হয়েছে।
এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়: ‘সুস্থ হই একসাথে, শিখি আর আলো ছড়াই।’ এ উপলক্ষে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন দাতা ও উন্নয়ন সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ব্র্যাকের কমিউনিটি বেইজড প্রোটেকশান এর কমিউনিটি গ্রুপের সদস্যদের আয়োজনে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের উখিয়ার ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণে অঙ্কন প্রতিযোগিতা ও মেহেদি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কমিউনিটি গ্রুপ স্বেচ্ছাসেবকরা কমিউনিটির অন্যান্য মানুষের হাতে রঙবেরঙের মেহেদি ডিজাইন লাগিয়ে বিশ^ শরণার্থী দিবস উপদযান করে।
এছাড়া উখিয়ার ক্যাম্প-২১ এ উন্মুক্ত আলোচনা, সচেতনতামূলক সেশনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া এতে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএইচসিআর-এর অ্যাসিসট্যান্ট কমিউনিটি বেইজড প্রোটেকশান অফিসার আবু মো. নুরুল হুদা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউএনইচসিআর এর আয়োজনে বিকালে সংস্থাটির অফিসে রোহিঙ্গাদের হাতে বানানো জিনিসপত্র নিয়ে এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ব্র্যাকের কমিউনিটি বেইজড প্রটেকশানের স্বেচ্ছাসেবকদের বানানো বিভিন্ন উপকরণ স্থান পায়।
কোভিড-১৯ শুরু থেকেই থেকেই ব্র্যাক এইচসিএমপির আওতাধীন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিখাত কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি অন্যান্য সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি শুরুর পর থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনের মাধ্যমে ১৪৬০ উপকারভোগীদেরকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দিয়েছে।
ব্যাক কমিউনিটি হেলথ স্বেচ্ছাসেবকগণ উখিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সচেতনতা বার্তা নিয়ে এই পর্যন্ত মোট ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৯১ টি পরিবার পরিদর্শন করে।
ইতিমধ্যে ৯৬,৫০০ জন মায়েদের প্রসবকালীন যত্ন ও সেবা, ১১,৯৫০ জন মায়েদের প্রসবোত্তর যত্ন ও পরিসেবা, ৭১,৯০০ জন নারীদের পরিবারের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা, ৭৭,৩০০ শিশু ও নারীদেরকে টিকা প্রদান এবং ২,৪০০ জন মায়েদের নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করা হয়েছে।
সঙ্কটের শুরু থেকেই ব্র্যাকের ‘ওয়াশ’ কমসূচি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে জরুরি ও প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করে। ওয়াশ কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়সহ মোট ৭০ হাজার জনগোষ্ঠীকে সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশনে সহায়তা দিয়েছে। প্রতিদিন ১৮,৫০, ০০০ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ টি পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে। ২০২০ সালের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে ২৭ হাজার ২১৭টি হ্যান্ড ওয়াশিং স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া নারী ও শিশু সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে ব্র্যাক। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের আওতায় উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ২০১৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৬৯৭৮ অতিদরিদ্র পরিবারকে দুই বছর মেয়াদী গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে ব্র্যাকের এরিয়া ডিরেক্টর হাসিনা আখতার হক বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ব্র্যাক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছে। মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই ব্র্যাক মানবিকবোধ থেকে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জরুরি সহায়তার কার্যক্রম হিসেবে ব্র্যাক রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু সুরক্ষা, ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন (ওয়াশ) এর মতো বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে এবং সেভাবে কাজ বাস্তবায়ন করছে।