ইমাম খাইর, সিবিএন:
জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ও ভোটার আইডিকার্ড পেতে সহযোগিতার অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে প্রত্যেক আসামির অপরাধের ধরণ বর্ণনা দেয়া আছে। বিশেষ করে, কক্সবাজার সদরের ইসলামাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক কিভাবে জন্মনিবন্ধন বই গায়েব করেছেন; রোহিঙ্গাদের সহায়তা করেছেন, তা স্পষ্ট বিবরণীতে এনেছেন মামলার বাদি।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম -২ এর উপ-সহকারী পরিচালক (সদ্য পটুয়াখালীতে বদলিকৃত) মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) মামলাটি করেন। যার মামলা নং-১৪/২১।
মামলায় নির্বাচন কর্মকর্তা, তিনজন পুলিশ কর্ককর্তাকে আসামি করা হলেও বাদ পড়েছেন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক। যেটিকে স্থানীয়রা বাদিপক্ষের ‘দুর্বলতা’ হিসেবে দেখছেন।
তবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদি মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক সম্পর্কে আরো তথ্য প্রমাণ নিবে। পরে প্রতিবেদনে যোগ করা হবে। সাধারণত: দুদক এরকমই করে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, ইসলামাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক নিজে লাভবান হয়ে রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদপত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান করেছেন।
ইসলামাদ ইউনিয়নের রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন বালাম বই, জাতীয়তা সনদপত্রের বালাম বই গায়েব করে ফেলা হয়েছে। যা অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক।
জবাবে চেয়ারম্যান কার্যালয় সুত্র নং-১৪৪/ইফাইল/২০১৯ মূলে জানান, জন্মনিবন্ধন বই নং-৪ এর পৃষ্ঠা নং-৩৭১ থেকে ৩৭৪ পর্যন্ত (যার নিবন্ধন বই নং-০২০৪৩৯ থেকে ০২০৪৯০) চারটি পাতা পাওয়া যাচ্ছে না।
এজাহারে আরো অভিযোগ আনা হয়- চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক কক্সবাজার নোটারি পাবলিক আইনজীবী আবুল কালাম আজাদের সহায়তায় পাসপোর্ট সত্যায়ন ও প্রত্যয়ন করেছেন। এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত দুদকের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
এদিকে, জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩ রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে কক্সবাজারের সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা, বর্তমানে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের অতিরিক্ত কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় মো. মোজাম্মেল হোসেন ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে অন্যান্য আসামিরা হলেন– কক্সবাজার ডিএসবির সাবেক ওসি, বর্তমানে রংপুর ডিআইজি অফিসের পুলিশ পরিদর্শক প্রভাষ চন্দ্র ধর, কক্সবাজার ডিএসবির সাবেক পরিদর্শক, বর্তমানে পটুয়াখালীর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এস এম মিজানুর রহমান, কক্সবাজার ডিএসবির সাবেক পরিদর্শক, বর্তমানে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রুহুল আমিন।
রোহিঙ্গা নাগরিকদের মধ্যে আসামিরা হলেন- মো. তৈয়ব, মোহাম্মদ ওয়ায়েস, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ রহিম, আবদুর রহমান, আব্দুস শাকুর, নুর হাবিবা, আমাতুর রহিম, আসমাউল হুসনা, আমাতুর রহমান, নুর হামিদা, মোহাম্মদ ওসামা ও হাফেজ নুরুল আলম।
এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র ধর, এসএম মিজানুর রহমান ও রুহুল আমিন অসৎ উদ্দেশ্যে লাভবান হয়ে এবং অপরকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট প্রদানের অনুকূলে ‘পুলিশ প্রতিবেদন’ প্রেরণ করেন।
মামলার বাদি মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩ জন রোহিঙ্গাকে জাতীয়তা সনদ ও পাসপোর্ট পাইয়ে দেন। প্রাথমিক তদন্তে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আজ তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১/০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্য সনদগুলো তৈরি করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আসামিদের জন্ম নিবন্ধন সনদের বালাম বই, জাতীয়তা সনদপত্রের মুড়ি বই নেই। এমনকি তাদের ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে সংরক্ষিত নেই। তাদের অধিকাংশই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ল্যাপটপ ছাড়াই অসম্পূর্ণ ফরম-২ ব্যবহার ভোটার হয়েছেন। আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল জালিয়াতির আশ্রয় ও ভুয়া পরিচয়, নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করে রোহিঙ্গা ১৩ নাগরিকের নামে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত করেছে। যা দন্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাতৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।