বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বালুখালী এলাকায় মুজিব কিল্লার (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র) নির্মাণকাজ শেষের আগেই ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্ন মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এ ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট ছনুয়ায় আপদকালীন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র বা মুজিব কিল্লার নির্মাণকাজ শুরু হয়। আর এ ভবনের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি সাত লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় জয়নাল আবেদীন কাজলের মালিকানাধীন ‘কাজল এন্ড ব্রাদার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সারাদেশের ন্যায় ছনুয়ায় এই মুজিব কিল্লা নির্মিত হচ্ছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া এ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে তা ভেস্তে যায়। প্রকল্পে মাটির কাজ, স্লোপ প্রোটেকশন, ক্যাটল শেডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হলেও তা অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে স্লোপ প্রোটেকশন ও ক্যাটল শেডে ফাটল দেখা দিয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিদর্শনে গেলে আগেভাগেই ফাটলগুলো সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।

এ প্রকল্পের ঠিকাদার মেসার্স কাজল এন্ড ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারী কাজল যেনতেনভাবে কাজ করে গেলেও; তার অনিয়ম নিয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। নির্মাণাধীন এই আশ্রয় কেন্দ্রের ভবনের তলায় যথাযথভাবে মাটি ভরাট করা হয়নি বলেও অভিযোগ আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এমরানুল হক বলেন, ‘আমাদের এলাকার ১২০টি পরিবারের চলাচলের রাস্তা কেটে মুজিব কিল্লা ভরাটের কাজে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে রাস্তা ধসে গেছে। রাস্তার গোড়া থেকে মাটি নেওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা জমির বিন হাসান বলেন, ‘কাজ শুরুর কিছুদিন পর নিম্নমানের কাজের অভিযোগে স্থানীয়দের প্রতিরোধে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সঠিকভাবে কাজ করার শর্তে পুনরায় কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ছাদ ঢালাই দেয় ২ ইঞ্চি। বিষয়টি আমি স্থানীয় মেম্বার রেজাউল করিমকে অবগত করার পর তিনি সরেজমিনে যান। এরপর ওনার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ইঞ্চি ঢালাই দিতে বাধ্য হয় ঠিকাদার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটি টেকসই হবে বলে মনে হচ্ছে না। বর্তমানে কাজ শেষ না হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। মুজিব কিল্লার মূল অংশের পাইলিং ঠিক থাকলেও পেছনের অংশে ঠিকভাবে পাইলিং না করার কারণে দেওয়াল দেবে গিয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন কাজল বলেন, ‘আমি কেন ওই কাজের দায়িত্ব পাবো? আমি কী কোন সরকারি কর্মকর্তা?’ বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘আপনি ভুল জায়গায় যোগাযোগ করেছেন। ওই প্রকল্প তদারকির দায়িত্ব আমার নয়। সেটা দেখভালের দায়িত্ব ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের। সেখানে আমাদের কোন হাত নেই।’

একই কথা বললেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাঈদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সেখানে সবকিছু ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের। ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার সবকিছু ঢাকা থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কোন হাত নেই।’