সিবিএন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নেটো জোটের সঙ্গে চীনের এক তীব্র সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে চীনকে বড় সামরিক হুমকি হিসেবে বিবেচনার পাশাপাশি দেশটির আচরণকে নেটো জোটের জন্য এক ‘ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জ’ বলে বর্ণনা করা হয়। খবর বিবিসি বাংলার।

স্বাভাবিকভাবেই নেটোর এই বিবৃতি চীনকে সাংঘাতিক ক্ষিপ্ত করেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র বলে পরিচিত গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় এ নিয়ে দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে নেটোর এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করা হয়।

চীন বলছে, তাদের শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। নেটো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই সামরিক জোটের ইতিহাসে চীনের বিরুদ্ধে এতটা কঠোর এবং বিরোধপূর্ণ অবস্থান গ্রহণের নজির নেই।

নেটোর সামরিক কৌশলে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়াকে এখনও প্রধান হুমকি বলেই দেখা হয়। কিন্তু এই প্রথম সেখানে চীনকে বিরাট বড় এক হুমকি হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। যদিও ইউরোপের কাছাকাছি কোথাও চীনের কোনও রকম সামরিক উপস্থিতি এখনও নেই।

নেটো যৌথ এক ইশতেহারে বলা হয়েছে, চীন তার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা অনেক দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছে। চীন যেভাবে তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করছে, সেটা গোপন রাখার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা শুরু করেছে।

নেটো বলছে, এগুলো তাদের জন্য এক ‘সিস্টেমেটিক চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিচারে চীন এখন নেটোর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। তবে চীনের সঙ্গে তারা একটা নতুন স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা করতে চান না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নেটোর যৌথ ইশতেহারের পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনা মিশন থেকে টুইটারে এক বিবৃতি দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, নেটো জোটের তরফ থেকে চীনের ‘শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের’ বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। চীন ‘আত্মরক্ষামূলক’ এক প্রতিরক্ষা নীতিতে বিশ্বাসী।

সেখানে বলা হয়, চীন কারও জন্যই ‘সিস্টেমেটিক চ্যালেঞ্জ’ হতে চায় না, কিন্তু এমন কোনও ‘সিস্টেমেটিক চ্যালেঞ্জ’ যখন আমাদের কাছে চলে আসবে আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো না। আর যেভাবে চীন সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করছে, সেটা ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত।

গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন আসলে চীনের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নেটোর মতো একটি সামরিক জোটকে ব্যবহার করছে। নেটো সম্মেলনে করা অভিযোগগুলো মিথ্যাচার। নেটোর বেশিরভাগ সদস্য চীনের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবেই মীমাংসা করতে চায়।

এদিকে নেটো জোট এখন রাশিয়ার পাশাপাশি চীনকেও যে এক নতুন সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে, তা নিয়ে জোটের মধ্যে মতপার্থক্যের আভাস দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। এটি চীনের সঙ্গে এক নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন কেউ কেউ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য জোট। আর চীনের সঙ্গে রয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক। ওয়াশিংটন চীনকে যেভাবে একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখে, ইউরোপের অনেক দেশ সেভাবে দেখে না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য এরকম স্নায়ুযুদ্ধের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার মনে হয় না, চীনের সঙ্গে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধে জড়াতে চাইবে কেউ। একই ধরনের কথা শোনা গেছে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের মুখেও।