রিয়াজ উদ্দিন, পেকুয়া:
পেকুয়ায় খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ শিকার। এতে করে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহেরনামা নন্দীরপাড়াসহ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ অংশের বিপুল এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একটি অসাধুচক্র নন্দীরপাড়ায় খালে বাঁধ নির্মাণ করে। জাল বসিয়ে মাছ শিকার করতে প্রবাহমান খালের স্রোতধারায় তৈরী করেছে বাঁধ। ফলে নন্দীরপাড়া, বাজারপাড়াসহ আশপাশের আরো বেশকিছু এলাকায় নিন্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নন্দীরপাড়ায় মন্ত্রীর নামকরণে একটি খাল খনন করা হয়েছিল। জোট সরকারের সময় সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ ২০০৫ সালের দিকে এ খালটি খনন করেন। পানির প্রবাহ ও নিষ্কাশনের জন্য মূলত নন্দীরপাড়ায় খাল খনন করা হয়েছিল। এর নামকরণ করা হয়েছে মন্ত্রীখাল নামে। বর্তমানে ওই খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মৎস্য শিকার। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নন্দীরপাড়া এলাকার মৃত সিরাজুল হকের ছেলে আলী আহমদ প্রকাশ ভূইল্যা নামক ব্যক্তি মন্ত্রীখালে বাঁধ তৈরী করেছে। বর্ষার সময় ওই খাল থেকে মৎস্য আহরণ করা হয়। কৃত্রিম স্রোতধারা নিয়ন্ত্রন করতে ওই ব্যক্তি প্রবাহমান খালে বাঁধ তৈরী করে। নন্দীরপাড়ার দক্ষিণ দিকে বদিউল আলমের বাড়ির নিকট একটি কালভার্ট রয়েছে। এরপর একই সড়কে আরেকটি কালভার্ট রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি নন্দীরপাড়া অংশে দুটি খালের সংযোগ স্থলে কয়েক বছর আগে কালভার্ট দুটি নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। মাতামুুহুরী নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ও নন্দীরপাড়া গ্রামীণ সংযোগ সড়কে এ কালভার্ট দুটির অবস্থান। সুত্র জানা গেছে, আলী আহমদ প্রকাশ ভূইল্যা নামক ব্যক্তি কালভার্টের মুখ আটকিয়ে পৃথক দুটি খালে বাঁধ তৈরী করেন। কালভার্টের মুখে জাল বসিয়ে আহরণ করেন মৎস্য। সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে, সদর ইউনিয়নের নন্দীরপাড়ায় দুটি সরকারী কালভার্ট এখন ব্যক্তি নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীন কালভার্ট দুটির মূল পয়েন্টে নির্মিত হয়েছে দুটি পৃথক বাঁধ। দক্ষিণ মেহেরনামার বাজারপাড়ার বাসিন্দারা জানান, নন্দীরপাড়ায় কালভার্ট আটকিয়ে মাছ শিকার হওয়ায় দক্ষিণ মেহেরনামায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এক সময় বাজারপাড়া ও নন্দীরপাড়ার বিলের ফসলী জমিতে আবাদ হতো আউশ ধানের চাষ। এখন কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারণে কয়েক বছর ধরে আউশ ধানের চাষ আর হচ্ছে না। বিলে পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরী করা সম্ভব হচ্ছেনা। এতে করে আগাম আউশ চাষ এ বিল থেকে এখন বিলুপ্তির পথে। জামাল হোসেন, মোহাম্মদ কালু, নাগু মিয়া, মিনহাজ, আবদুল মালেক,মোহাম্মদ আজিজসহ নন্দীরপাড়ার আরো অনেকে জানান, এখন থেকে ৬ মাস আমরা পানির দুর্ভোগের মধ্যে থাকব। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এখানে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী। মাতামুহুরী নদীর পানি ডুকছে লোকালয়ে। নন্দীরপাড়ার দক্ষিণ দিকে একটি স্লুইচ গেইট রয়েছে। পাউবোর ৬৪ ২বি পোল্ডারের ৩৬ নং স্লুইচ গেইট দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। শাহজাহান প্রকাশ পটু নামক ব্যক্তি মাছ শিকার করতে স্লুইচ গেইট খোলা রাখে। মাতামুহুরী নদীর পানি ফাঁড়ি খালে গড়িয়ে পড়ছে। এ পানির স্রোতে সদর ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সারা বছর দুর্ভোগ পাউবোর এ স্লুইচ গেইটটি। রক্ষনাবেক্ষনের নামে এখানে মানুষের আর্থ সামাজিক বিপর্যয় হচ্ছে। পেকুয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ জানান, আসলে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছিল। পানি চলাচল আটকিয়ে জাল বসানো খুবই অন্যায়। আমি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোতাচ্ছেম বিল্যাহ জানান, স্লুইচ গেইট রক্ষনাবেক্ষনের জন্য একটি কমিটি থাকে। এখন কারা এর দায়িত্বপালন করছেন সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। আমি পাউবোর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। কালভার্ট আটকিয়ে মাছ শিকারের বিষয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেকুয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে